শেয়ার বিজ ডেস্ক: পাকিস্তানে ফের বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। গতকাল রোববার দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার লিটারে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম ৩৫ রুপি করে বাড়িয়েছে। পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার এ ঘোষণা দেন। খবর: দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
সম্প্রতি মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের রুপির রেকর্ড দরপতন হয়েছে। এতে গত বৃহস্পতিবার ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি মুদ্রার দর দাঁড়িয়েছে ২৫৫ রুপিতে। অর্থাৎ এক মার্কিন ডলার সমান ২৫৫ দশমিক ৪৩ পাকিস্তানি রুপি। এরপর পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
আর্থিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, সংক্ষেপে আইএমএফ) ঋণ পেতে মরিয়া পাকিস্তান। তাই শর্ত মেনে মুদ্রা বিনিময় হার বা এক্সচেঞ্জ রেট শিথিল করেছে দেশটি। এর মধ্যে পাকিস্তানি মুদ্রার ব্যাপক দরপতন হয়। এর জেরে এবার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হলো।
গতকাল টেলিভিশনে ভাষণ দেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, পেট্রোল ও ডিজেলের দাম ৫০ থেকে ৮০ রুপি বৃদ্ধির বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জল্পনা-কল্পনা চলছে এবং এ কারণে দেশে কৃত্রিম জ্বালানি ঘাটতির প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সরকার যেসব কারণে তাৎক্ষণিকভাবে পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম বাড়িয়েছে তার একটি হলোÑভুল তথ্য।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার গুজবে পাকিস্তানের নাগরিকরা গত কয়েকদিন ধরে পেট্রোল স্টেশনে ভিড় করছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের তেল ও গ্যাস নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (ওজিআরএ) মানুষকে বিভ্রান্তিকর এবং ভুল তথ্য ছড়ানো বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছে।
ইসহাক দার বলেছেন, অস্থায়ী মজুত ও পেট্রোলের ঘাটতি সম্পর্কে ছড়িয়ে পড়া গুজব ঠেকাতে ওজিআরএ প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও সরকারকে অবিলম্বে নতুন মূল্য বাস্তবায়নের অনুরোধ করেছে। পাকিস্তানের এ অর্থমন্ত্রী তার ভাষণে স্বীকার করেছেন, জ্বালানি তেল নিয়ে ছড়িয়ে পড়া জল্পনা-কল্পনা বাজারে কৃত্রিম ঘাটতি তৈরি করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়ামের দাম ১১ শতাংশ বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। গত বছরের অক্টোবর থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত গত চার মাসে একবারও দাম বাড়ানো হয়নি। প্রকৃতপক্ষে এ সময়ের মধ্যে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম ১৯ বা ২০ রুপি কমেছে বলে তার দাবি। এছাড়া ওই সময়ের মধ্যে কেরোসিন তেল ও লাইট ডিজেল তেলের দাম ২৯ ও ৩০ রুপি কমেছে বলে জানান তিনি।
তবে ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে পাকিস্তানে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম ৩০ রুপি বাড়ানো হয়। দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ৩০ রুপি দাম বাড়ানোর পরও প্রতি লিটার পেট্রলে এখনও ৯ রুপি ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। আমরা জ্বালানি তেল থেকে কোনো ধরনের শুল্ক নিচ্ছি না। তিনি আরও বলেন, আইএমএফের সঙ্গে সরকার প্রতিদিনই কথা বলছে। আমরা তাদের সব শর্ত পূরণ করতে পারছি না। তবে কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয় আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে।
এদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করায় সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলের নেতারা। তাদের অভিযোগ, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খাচ্ছে সরকার। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত ও অক্ষম আমদানি সরকার’ তেলের দাম বৃদ্ধি করে জনগণের ওপর দুর্ভোগ চাপিয়ে দিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা তুলে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। সেন্ট্রাল অরগানাইজেশন অব ট্রেডারস অব পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট কাশিফ চৌধুরি ৩৫ রুপি তেল বৃদ্ধির ঘোষণা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, এতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। তিনি শিগগির দাম কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন।