পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

শেয়ার বিজ ডেস্ক : জম্মু-কাশ্মীরের পর্যটন শহর পেহেলগামে রক্তাক্ত হামলার বদলা নিতে পাকিস্তানের ৯টি স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। এর পরই পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে ভারত। দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের সংঘাতপূর্ণ এই উত্তেজনায় উপমহাদেশ এক নতুন অস্থিরতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ হিসেবে শুরু হয় ভারতের সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তানের ৯টি ‘জঙ্গি আস্তানা’য় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানান, রাত ১টা ৪ মিনিটে শুরু হয়ে মাত্র ২৫ মিনিটের অভিযানে পাকিস্তান ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। ভারত দাবি করে, সুনির্দিষ্টভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মুহাম্মদ ও হিজবুল মুজাহিদিনের ঘাঁটি লক্ষ করে আঘাত হানা হয়েছে। ভারতের বিমান, নৌ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনায় হামলা হয়নি বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি।

এনডিটিভি জানায়, বুধবার সকালে নয়াদিল্লিতে সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এবং কর্নেল সোফিয়া কোরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং এসব তথ্য দিয়েছেন। তারা বলছেন, এই অভিযান ছিল ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার ‘পরিমিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ’ জবাব। ভারত যে কৌশলে পরিবর্তন এনেছে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ তারই ইঙ্গিত বলে জানান কর্নেল কোরেশি।

দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, হামলায় অন্তত ৭০ সন্ত্রাসী নিহত ও ৬০ জনের বেশি আহত হয়েছে। হামলার সময় উপগ্রহচালিত ও লেজার-নির্দেশিত অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, হামলায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২৬ বেসামরিক নাগরিক, যাদের মধ্যে শিশু ও নারীও রয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৪৬ জন।

এদিকে ভারতের সীমান্ত লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায় কামানের গোলা ছুড়েছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। ভারতের সেনাবাহিনী বলেছে, মঙ্গলবার রাত থেকে পাকিস্তানের ছোড়া কামানের গোলার আঘাতে ভারতে ১৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৪৩ জন আহত হয়েছেন। বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির লাইভ আপডেটে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী বলেছে, ‘ভারত-অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চ ও তাংধরের বেসামরিক এলাকায় গোলাবর্ষণ করেছে পাকিস্তান।’

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তানের যে নয়টি স্থানে হামলা চালানো হয়, এর মধ্যে পাঁচটিই পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অবস্থিত। বাকি চারটি পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে, যার মধ্যে আছে বাহাওয়ালপুর, এটিকে জইশ-ই-মুহাম্মদের ঘাঁটি মনে করে নয়াদিল্লি। আর মুজাফফরাবাদ ও ভিমবারকে আগেও ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অনুপ্রবেশের ট্রানজিট ও লজিস্টিক কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছিল ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো।
ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে ধ্বংস হয়েছে বাহাওয়ালপুরের আহমেদপুর ইস্টে একটি মসজিদ ও চারটি বসত ঘর। মুজাফফরাবাদে বিলাল মসজিদে হামলায় নিহত হয়েছেন তিনজন এবং আহত হয়েছে দুই শিশু। কোটলির আব্বাস মসজিদে ১৬ ও ১৮ বছর বয়সী দুই তরুণ-তরুণী প্রাণ হারিয়েছেন। মুরিদকে শহরে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে একটি স্কুল, কলেজ ও ছাত্রাবাসে। শিয়ালকোট ও শাখারগড়ে বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকাজুড়ে।

হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকিস্তান জানায়, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে তিনটি রাফায়েল, একটি এসইউ-৩০ ও একটি মিগ-২৯। পাকিস্তান দাবি করে, এগুলো তাদের আকাশসীমায় প্রবেশ করে হামলা চালিয়েছিল। তবে ভারতের পক্ষ থেকে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাবর্ষণে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে তিন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। একই সময়ে পাকিস্তানও জানায়, ভারতের ছোড়া গুলিতে পাঁচ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের একজন শিশু।

উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল এবং হাসপাতালগুলোয় উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইসলামাবাদেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। ভারতের শ্রীনগর, জম্মু, অমৃতসর, যোধপুরসহ একাধিক বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। বাতিল হয়েছে শতাধিক ফ্লাইট।

ভারতের হামলার ঘটনায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘ভারতের কাপুরুষোচিত হামলার জবাব পাকিস্তান দেবে।’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, ‘তারা (ভারত) আকাশসীমা থেকে হামলা চালিয়েছে, আমরা মাটিতে নেমে জবাব দেব।’

এদিকে ভারতের হামলার নিন্দা জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে ‘হতাশাজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বিশ্ববাসীর জন্য ভয়ংকর হবে।’ তিনি উভয় দেশকে সংযত আচরণ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। চীন, জাপান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও উদ্বেগ জানিয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভারত-পাকিস্তানের এই সংঘাতে সরাসরি কোনো না কোনো পক্ষ নিয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছে। ইসরায়েল ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘাতে ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছে। অপরদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসহাক দারের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তুরস্ক। এই সংকটে উভয় দেশ অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে থাকতে রাজি হয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘তারা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক দ্বন্দ্ব নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’ উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান তিনি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও উভয় পক্ষকে সংযম দেখাতে বলা হয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, এনডিটিভি, এএফপি।