Print Date & Time : 7 September 2025 Sunday 8:15 am

পাকিস্তানে সুদের হার ২৪ বছরে সর্বোচ্চ

শেয়ার বিজ ডেস্ক:মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবং খাদ্য সংকট সমস্যা মোকাবিলায় সুদের হার বাড়িয়েছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান। ১০০ বেসিস পয়েন্টে নতুন সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ শতাংশ, যা পাকিস্তানে গত ২৪ বছরে সর্বোচ্চ। খবর: ডন।

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা কমিটি উল্লেখ করেছে, মূল্যস্ফীতিসংক্রান্ত চাপ অব্যাহত ছিল এবং এটি বাড়ছিল। যদি এ বিষয়টি না দেখা হয়, তাহলে মুদ্রাস্ফীতি ধারণার চেয়ে বাড়তে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

এদিকে বর্তমানে পাকিস্তান চরম অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। অপরদিকে কমেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বর্তমানে রিজার্ভে যে পরিমাণ অর্থ রয়েছে সেগুলো দিয়ে মাত্র তিন সপ্তাহ বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করা যাবে।

পাকিস্তানে গত বছরের ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। নভেম্বরে এটি ছিল ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ। ডিসেম্বরে আবাসন, পরিষেবা ও যোগাযোগ ছাড়া অন্য সব খাতে মূল্যস্ফীতির হার দুই অঙ্কের ঘরে উঠেছে। মূল্যস্ফীতির হার সবচেয়ে বেশি ছিল খাদ্যপণ্য ও পরিবহন খাতে। এ দুটি খাতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল যথাক্রমে ৫৫ দশমিক ৯৩ ও ৪১ দশমিক ১৬ শতাংশ। ডিসেম্বরে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৫৮০ কোটি ডলারে, যা আট বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। বিদেশি ঋণের সুদ ও কিস্তি দিতে গিয়ে দেশটির রিজার্ভ ২০১৪ সালের এপ্রিল-পরবর্তী সময়ে সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমে এসেছে। এ রিজার্ভ দিয়ে এক মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে বলে জানা গেছে। ফলে সব মিলিয়ে পাকিস্তান আইএমএফের সব শর্ত মেনে নেবে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

আগামী তিন মাসের মধ্যে পাকিস্তানকে মোট ৮০০ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে আবার চলতি মাসেই দুটি বিদেশি ব্যাংকের ১০০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ফলে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছেন পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকেরা। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস এবং স্থানীয় মুদ্রার দরপতনে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে পাকিস্তান। ২০২১ সালের মার্চে ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির বিনিময় মূল্য ছিল ১৭৭, এখন আন্তঃব্যাংকপর্যায়ে তা ২২৬ রুপিতে উঠেছে। খোলাবাজারে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য পড়ছে ২৬০ থেকে ২৭০ রুপি। এসঅ্যান্ডপি, মুডিস ও ফিচের মতো শীর্ষ তিন ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা পাকিস্তানের ঋণমান অবনমন করেছে।

এত কিছুর পরও পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার মনে করছেন না, পাকিস্তান দেউলিয়া হয়ে যাবে। এ ভয় তিনি একপ্রকার উড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা তার সঙ্গে একমত হতে পারছেন না। তারা বলছেন, পাকিস্তানের অর্থনীতির অবস্থা আশঙ্কাজনক।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামরিক-বেসামরিক সম্পর্কে ভাঙন, বিলম্বে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, আইএমএফের ঋণ গ্রহণে গড়িমসি ও কাঠামোগত সংস্কার আনয়নে অনিচ্ছার কারণে সংকট ত্বরান্বিত হচ্ছে। তারা মনে করছেন, এখন সময় এসেছে এটা স্বীকার করার, আইএমএফের সঙ্গে দেনদরবার ছাড়া পাকিস্তান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

দেশটিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন হাহাকার চলছে। বর্তমানে পাকিস্তানে সাধারণ দোকানে প্রতি কেজি আটা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ রুপিতে। ফলে অনেকে কম দামি আটা কিনতে দীর্ঘ লাইন ধরছেন। এছাড়া কমে গেছে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও। সম্প্রতি দেশটিতে চালানো একটি জরিপে উঠে এসেছে, ভোক্তা এবং ব্যবসায় স্ফীতি বাড়তেই থাকবে।

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতি অস্থিতিশীল সময় কাটাচ্ছে, যা পাকিস্তানের অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলেছে। এ অস্থিতিশীল সময়ের ব্যাপ্তি বেশিও হতে পারে আবার কমও হতে পারে।

অর্থনৈতিক সংকটের কারণে পাকিস্তানের শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আইএমএফের ঋণ না নিলে পাকিস্তান দেউলিয়া হয়ে যাবে। সামগ্রিকভাবে পাকিস্তান যে সংকটে পড়েছে, তাতে গত ৭ মাসে দেশটির প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষ দেশ ছেড়েছেন।