শেয়ার বিজ ডেস্ক: পাকিস্তানে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ২৭ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছায়, যা গত ৪৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। খবর: ডন।
পাকিস্তানে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। দেশটির পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, ভোক্তা মূল্য সূচকের (সিপিআই) তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। শহুরে এলাকায় গত এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে ৩২ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া মূল মূল্যস্ফীতি, যাতে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যটি অন্তর্ভুক্ত নয়, সেটিও শহুরে এলাকায় ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাকিস্তানের বিনিয়োগকারী সংস্থা আরিফ হাবিব লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে মূল্যস্ফীতি এত বেশি ছিল ১৯৭৫ সালে। সে বছর মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ। মধ্যস্থতাকারী কোম্পানি টপলাইন সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ সোহাইল বলেছেন, রুপির দরপতন, ভর্তুকি বন্ধ করে দেয়া ও কর বৃদ্ধির পরই বোঝা গিয়েছিল মূল্যস্ফীতি বাড়বে।
পাকিস্তানে পেঁয়াজ, মুরগি, চালের আটা, আটা, কলাই, মুগ ডাল, ছোলা ডাল, বেসন, সরিষা তেল, মাসের ডাল, তাজা ফল, রান্নার তেল, খাঁটি দুধ, ঘি, টমেটো, মাছ, মশুর ডাল, মাংস, তাজা সবজি, আলু ও চিনির দাম আকাশচুম্বী। এ মূল্যস্ফীতি চলতি মাসে আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির শঙ্কা আরও বাড়িয়েছে। এছাড়া বর্তমানে পাকিস্তান সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করছে। আইএমএফ এ ঋণ দিতে সম্মত হলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে।
পরিসংখ্যান বলছে, জানুয়ারিতে পচনশীল খাদ্যসামগ্রীর দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, যা ৬১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। তার পর রয়েছে বিনোদন ও সংস্কৃতি (৪৪ দশমিক ১৪ শতাংশ)। অপচনশীল খাদ্যসামগ্রীর দাম বেড়েছে ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ, পরিবহন খরচ ৩১ দশমিক ১ শতাংশ, অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় ও তামাক ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ, রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে ৩১ দশমিক ১ শতাংশ, আসবাব ও গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ, বিবিধ পণ্য ও পরিষেবা ব্যয় ২৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ, স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় ১৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ, পোশাক ও জুতার দাম ১৬ শতাংশ এবং শিক্ষায় বাড়তি গুনতে হচ্ছে ১০ দশমিক
৫৮ শতাংশ।
এদিকে চরম অর্থনৈতিক সংকটের জেরে পাকিস্তানে বেকারত্ব ক্রমেই বাড়ছে। উন্নত জীবন ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় অনেক তরুণকে দেশ ছাড়তে উদ্বুদ্ধ করেছে। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট তার দেশ ছাড়ার বড় একটি কারণ। পাকিস্তানের আরও অনেক তরুণ একে একে দেশ ছাড়তে শুরু করেছেন। এ ধারাবাহিকতায় গত বছর আট লাখের বেশি তরুণ চাকরির সন্ধানে পাকিস্তান ছেড়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির অভিবাসন ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক ব্যুরো। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। করোনা মহামারির আগে ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ২৫ হাজার ৮৭৬। তার আগের বছর পাকিস্তান ছাড়েন আরও কম ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪৩৯ জন।
পাকিস্তানে চরম অর্থনৈতিক সংকটের জেরে কাজ নেই, বেকারত্ব ক্রমেই বাড়ছে। পাকিস্তানে আগে থেকেই অর্থনৈতিক সংকট চলছিল। করোনা মহামারি আর গত বছরের প্রলয়ংকরী বন্যা এ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। অনেক জায়গায় দেখা দিয়েছে খাবারের সংকট। বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। সেই সঙ্গে মুদ্রাবাজারে ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের রুপির ক্রমাগত দরপতন অব্যাহত রয়েছে।
খাবার ও জ্বালানির বাড়তি দামের লাগাম টানা এবং চলমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে পাকিস্তান সরকার। আইএমএফ থেকে ঋণ নিয়ে সংকট সামলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে তরুণদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা পাকিস্তানকে দীর্ঘ মেয়াদে ভোগাতে পারে।