‘চুক্তি হবে ৩০টির মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে: বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিশেষ আইন হচ্ছে’ শীর্ষক প্রতিবেদন গতকাল দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তথ্যমতে, সোমবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গত ১৫ বছরে যে অর্থ পাচার হয়েছে, তা ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষ একটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। অধ্যাদেশ আকারে শিগগির এই আইনটি প্রণীত হবে। দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অন্তর্বর্তী সরকার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছিল। ওই কমিটির তথ্য অনুসারে ২০০৯ থেকে গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়। এর মধ্যে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার হয় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে। প্রধান উপদেষ্টা প্রথম থেকেই বলে আসছেন এটি তাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের একটি। কারণ এটি বাংলাদেশের মানুষের টাকা।
দেশের অর্থ ফিরিয়ে আনার চেষ্টাকে সাধারণ মানুষ তথা দেশবাসী স্বাগত জানবে বলেই ধারণা। বিদ্যমান সংকট ঠেকাতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। যত উদ্যোগই নেয়া হোক সর্বাপেক্ষা ফলপ্রসূ হবে অর্থ পাচার রোধ করা। সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি প্রবচন খুব চালু আছে। তা হলো—জাল ছেঁড়া হলে চলে কিন্তু খালই (মাছ রাখার পাত্র) ভাঙা হলে চলে না। অর্থাৎ ছেঁড়া জাল হলেও কিছু মাছ ধরা পড়বে কিন্তু খালই ভাঙা হলে সব মাছই বেরিয়ে যাবে। তাই কোনো অবস্থায়ই খালই ভাঙা রাখা চলবে না।
গত শতকের সত্তরের দশক থেকেই অর্থ পাচার চলে আসছে। তখন থেকেই বড় আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতারা বিভিন্নভাবে অর্থ পাচারের সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন বলে ধারণা করা হয়। অনেকে মনে করেন, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণেও দেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়েছে।
ব্যাংকঋণ খেলাপিদের ওপর ২০১০ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশের ১২৫টি ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিচালিত জরিপের সংগৃহীত তথ্যে প্রমাণিত হয়েছে, ওইসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মালিকরা তাদের ব্যাংকঋণের একটা বড় অংশ বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির, বিনিয়োগ অত্যন্ত মন্থর, তখন অঢেল অর্থের টাকার মালিকদের উদ্বৃত্ত অর্থ বিদেশে পাচার হয়। এটি স্বীকার করতেই হবে, অসদুপায়ে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার না হলে দেশের অর্থনীতিতে কোনো না কোনোভাবে ভূমিকা রাখে। সরকারের উচিত হবে, পাচার করা অর্থ উদ্ধারের পাশাপাশি বিদ্যমান পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। আমাদের দেশে বড় শিল্প গোষ্ঠীগুলোর মুনাফা অর্জনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাকলেও তারা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করে খেলাপি হয়ে যায়। এর একটা কারণ, অবৈধভাবে বিদেশে মুনাফা পাচার। এ ক্ষেত্রে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে বারবার ঋণ পুনঃতফসিলকরণ, সুদ মওকুফ প্রভৃতি সুবিধা দিতে হয়। তাই সব ফাঁকফোকর বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। এক-দুজন অর্থ পাচারকারীকে শূন্য সহনশীলতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া গেলে সব অর্থ পাচারকারী নিবৃত্ত হবেন বলেই প্রত্যাশা।