পাটের দামে খুশি কুষ্টিয়ার চাষিরা

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় মৌসুমের শুরুতেই ‘সোনালি আঁশ’ পাটের মূল্য ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। এবার পাটের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফোটেছে। বর্তমানে পাট কাটা, জাগ দেয়া, পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানো ও শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার চাষিরা। তবে এ বছর অনাবৃষ্টির কারণে অনেক পাটগাছ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি বিভাগ।

কুষ্টিয়ার মুখ্য পাট পরিদর্শক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় এক লাখ ২৫ হাজার ২৮০ একর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে চাষ হয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ২৮০ একর জমিতে।

এ বছর কুষ্টিয়া সদরে পাঁচ হাজার ৪২৬ একর, কুমারখালীতে ১২ হাজার ৫৮৭ একর, খোকসায় ১০ হাজার ৭৪৪ একর, মিরপুরে ১২ হাজার ৬৯৫ একর, ভেড়ামারায় ২২ হাজার ৯৪৬ একর এবং দৌলতপুরে ৫০ হাজার ৮৮২ একর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত বছর জেলায় পাট চাষ হয়েছিল এক লাখ এক হাজার একর জমিতে।

এ বছর জমিতে দেশি, রবি-১, মোস্তা, জেআরও এবং তোষা জাতের পাট চাষ করা হয়েছে। তবে উচ্চ ফলনশীল তোষা জাতের পাট চাষ হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

কৃষকরা জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর পাটের দাম কিছুটা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এ বছর মৌসুমের শুরুতেই বাজারে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকায়। প্রতি বিঘায় শুধু পাট বিক্রি করেই কৃষক লাভবান হচ্ছেন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে পাটকাঠির দাম যুক্ত করলে প্রতি বিঘায় এখন কৃষকের লাভ হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার টাকা।

জেলায় বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পাট কাটা, জাগ দেয়া, পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানো ও শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। বৃষ্টিতে পুকুর-নালা, খাল-বিল ও ডোবাতে পানি না থাকায় এবার পাট জাগ দেয়ার অনেক চাষিদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। নদীতে অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে পাট এনে জাগ দিতেও দেখা গেছে।

কুষ্টিয়ার সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাটচাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ জমি থেকে পাট কাটছেন, কেউ পাটের বোঝা বাঁধছেন, কেউ কেউ মাথায় করে সেই বোঝা নিয়ে যাচ্ছে নদী-খাল কিংবা পুকুরে। আবার অনেক জায়গায় পাট জাগ দিচ্ছেন কৃষকরা। অনেকে আঁশ ছাড়িয়ে, পানিতে ধুয়ে শুকিয়ে বিক্রির জন্য বাজারে নিচ্ছেন।

সদর উপজেলার পাটচাষি হামিদুর রহমান বলেন, গত বছরের তুলনায় দাম ভালো পাওয়া গেছে। ফলনও মোটামুটি। এবার আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা মণ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে পাট। এতে আমরাও খুব খুশি। ভালো দাম পেলে আগামীতেও আগ্রহ বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, পাটের সঙ্গে সঙ্গে পাটকাঠির চাহিদাও বেশি। সব মিলে চাষিরা খুশি। জ্বালানির কাজ ও বেড়া দেয়ার কাজে পাটকাঠির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ জন্য দিন দিন পাটকাঠির দাম ও চাহিদা বাড়ছে।

দৌলতপুর উপজেলার পাটচাষি আব্দুল করিম বলেন, এ অঞ্চলে এবার অনেক কৃষক পাটের আবাদ করেছেন। তবে পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় পাট জাগ দিতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া এখনও তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। বৃষ্টিপাত বাড়লে পাট জাগ দেয়ায় সুবিধা হবে। পরিষ্কার পানিতে পাট জাগ দিলে পাটের মানটা ভালো হয়।

কুষ্টিয়া জেলা পাট অধিদপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তা সোহরাব উদ্দিন বিশ্বাস জানান, এ বছর মৌসুমের শুরুতেই বাজারে পাটের ভালো মূল্য পাচ্ছেন চাষিরা। বর্তমানে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার দিকে পাট বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা মণ দরে। এছাড়া কুমারখালী ও খোকসা উপজেলার দিকে পাট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা থেকে ৩১০০ টাকা মণ দরে। তবে এ বছর অনাবৃষ্টির কারণে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হাওয়ার আশঙ্কা করছেন। এবার অতি খরার কারণে অনেক পাট নষ্ট হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ২ লাখ বেল পাট উৎপাদন হয়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধাণ করা হয়েছে ৫ লাখ বেল পাট।