Print Date & Time : 15 August 2025 Friday 7:31 am

পাট ও পাটজাত দ্রব্য পুনরুদ্ধার করতে হবে

সোনালি আঁশের দেশ বাংলাদেশ। এ দেশের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করে। আর এসব বসবাসকারীর জীবন ধারণের একমাত্র উৎস হলো কৃষিকাজ। এই কৃষিকাজের মাধ্যমে তারা তাদের জীবন পরিচালনা করে। আর এই কৃষিকাজে নানা রকম পণ্য উৎপাদন করেন কৃষকরা। এসব পণ্যের মধ্যে অন্যতম এক পণ্যের নাম হলো পাট। পাটের কারণে একসময় এই দেশকে বলা হতো সোনালি আঁশের দেশ। কৃষিজমিতে যখন পাটের গাছগুলো বাতাসের মাধ্যমে দোল খায়, তখন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পরিলক্ষিত হয়। আবার প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরবর্তী সময়ে পাট পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। এরপর ছাল ছড়ানোর কাজ করা হয় তখন এক অন্যরকম দৃশ্য দেখা যায়। এর পরবর্তী সময়ে ছড়ানো আঁশ রোদে শুকানোর মাধ্যমে সোনালি রং ধারণ করে এই পাটগুলো। পাটের যখন আঁশ ছাড়ানো হয় তখন তার মাঝের অংশ দিয়ে জ্বালানি কাজ সম্পন্ন করে কৃষক শ্রেণির মানুষ। পাট লাগানো থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত এই ক্ষেত্রের সঙ্গে অনেক মানুষের জীবন পরিচালিত হয়। একসময়ের এই পাট এখন বিলুপ্তির পথে। দেশের কৃষি জমিতে আর সারি সারি পাটের আবাদ দেখা যায় না। বাতাসের মধ্যে দোল খাওয়া পাটের গাছ এখন যেন স্বপ্ন। বাংলাদেশের এই পর্যাপ্ত পাট চাষ হওয়ার কারণে দেশে সেসময় পাটকল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শুধু কি দেশে, দেশের বাইরেও পাট রপ্তানি হতো। বাংলাদেশের পাটের প্রধান ক্রেতা ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন ধনী দেশগুলো। কিন্তু কালের পরিক্রমায় আজ তা হারিয়ে গেছে। পাটের জায়গা দখল করেছে প্লাস্টিক। একসময়ের পাটের ব্যাগের জায়গায় আজ পলিথিনের ছড়াছড়ি দেখা যায়। এছাড়া গালিচা, বস্তা, কার্পেটের, জায়গায়ও আজ প্লাস্টিকের ব্যাপকতা দেখতে পাওয়া যায়। এর  কারণ হচ্ছে, পাটের চাষ কমে যাওয়া এবং সরকারের সুদৃষ্টির অভাব। দেশের সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজী পাটকল বন্ধ রয়েছে। এই বন্ধ থাকাই প্রমাণ করে দেশের পাট শিল্পের অবস্থান। এই নাজুক অবস্থানের মধ্য বর্তমানে আশার আলো দেখছে পাট শিল্প। আজকের আলোচনার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, পাট শিল্পের ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়ে। গত দুই বছর ধরে পাটের ভালো দাম পাচ্ছে কৃষক। পাটের দাম সর্বশেষ ২০০০ পর্যন্ত উঠেছিল। বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আশার আলো দেখছেন দেশের পাটচাষিরা। এ বছর মৌসুমের শুরুতে ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে পাট। পাটের এই দামের ফলে এক কোটি চাষি ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। এই পাট দিয়ে ব্যাগ, পার্টস, জুতা, শতরঞ্জি, শিখা, পাপোশ, টুপি, মানিব্যাগ, কম্বল ইত্যাদি তৈরি হয়।  উল্লিখিত এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এখন সরকার পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়ার কারণে এই খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশে আসা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া দেশের শিল্পে এক-তৃতীয়াংশ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। করোনার কারণে নতুন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে এক অশুভ প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া করোনার কারণে অন্য শিল্পের ক্ষতি হলেও, পাট শিল্পের কোনো ক্ষতি হয়নি। পাটের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার চাহিদা পূরণ করতে পারে বাংলাদেশ। কারণ প্রাচীনকাল থেকেই এই দেশ আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের একচেটিয়া রপ্তানিকারক ছিল। তাই বাংলাদেশের উচিত হবে পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত দ্রব্যের অবস্থান কেমন তা একটা হিসাবের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। গত বছর এই পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে ১০৩ কোটি ৫৭ লাখ ডলার আয় হয়েছে। এ বছর সারাদেশে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে, ৯০ লাখ বেল পাট উৎপাদন। গত বছর চাষ  হয়েছিল ৬ লাখ ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে। সারাবিশ্বের মোট পাটের ৯০% উৎপাদন করে ভারত ও বাংলাদেশ। এককভাবে বাংলাদেশের বিশ্বে উৎপাদিত কাঁচা পাটের ৪০ শতাংশ উৎপাদন করে। বাংলাদেশের উৎপাদিত পাটের ৪০ শতাংশের অধিকাংশ  রপ্তানি হয় মধ্যপ্রাচ্যে। বাংলাদেশ পাটকলগুলো বন্ধ থাকার পরও পাটের দাম ভালো রয়েছে। কারণ বেসরকারিভাবে পাট ক্রয় করার মাধ্যমে এসব চাহিদাসম্পন্ন দেশে রপ্তানি করছে এসব প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পাটের যে অবদান রয়েছে সেটা অস্বীকার করা যাবে না।  পাটকলগুলো চালু করার মাধ্যমে সম্ভাবনাময় এই খাতকে সচল করতে হবে। তবেই সোনালি আঁশে পূর্ণ হবে আমার বাংলাদেশ।

জাফর ইসলাম

শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আরবি সাহিত্য বিভাগ