পাথর আমদানি নির্ভর নাকুগাঁও স্থলবন্দর

নাকুগাঁও স্থলবন্দরে অনুমোদিত ২১টি পণ্যের মধ্যে আমদানি করা হচ্ছে শুধু পাথর। এতে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা নয়াবিল ইউনিয়নের ভোগাই নদীর তীরবর্তী স্থানে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের সঙ্গে ত্রিদেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্থাপন করা হয় নাকুগাঁও স্থলবন্দর। ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সাধারণ লোকজনের যাতায়াতে এখানে স্থাপন করা হয়েছে নাকুগাঁও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। ওই এলাকার ১৩ দশমিক ৪৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে ২০১৫ সালের ১৮ জুন পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে এই বন্দরটির কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে কাস্টম হাউস, ওয়্যার হাউস ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ভবনসহ প্রায় ১৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। একই সঙ্গে এই বন্দরের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবলও নিয়োগ করা হয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে ঠিকই। কিন্তু অনুমোদিত ২১টি পণ্যের মধ্যে মাত্র একটি পণ্য পাথর ছাড়া অন্যসব পণ্য এই বন্দরে আমদানি না করা হয় না। তাই এখনও জমে উঠেনি এই বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম। এতে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। অনুমোদিত আমদানিযোগ্য পণ্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করে এই বন্দরকে আরও গতিশীল করার দাবি জানান তারা। একই সঙ্গে এই বন্দরে মানি এক্সচেঞ্জ অফিস স্থাপনের দাবি রয়েছে তাদের।

জানা গেছে, নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে গবাদিপশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছগাছালি, বীজ, গম, পাথর, কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বল ক্লে, কোয়ার্টজ, শুঁটকি মাছ ও সুপারিসহ ২১টি পণ্য আমদানি এবং বাংলাদেশ থেকে সকল প্রকার বৈধ পণ্য রপ্তানির জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। বন্দর চালুর প্রথমদিকে কয়লা ও পাথর আমদানি করতেন ব্যবসায়ীরা। পরে দুই এক চালান আদা ও শুকনা মরিচ আমদানি করে নানা জটিলতায় আর এসব পণ্য আমদানি করা হচ্ছে না। এই বন্দরে ২১টি পণ্য আমদানির অনুমতি থাকলেও কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে আমদানি করা হচ্ছে মাত্র একটি পণ্য, শুধু পাথর। গত কয়েক মাসে মাত্র ২০০ টন সিমেন্ট রপ্তানি করা হয়েছে ভারতে, যা খুবই কম। তাই দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যৌথভাবে সভা আহ্বান করে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন।

নাকুগাঁও স্থলবন্দরের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, এই বন্দরে মোট ২৩০ আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী রয়েছেন। এর মধ্যে ৬০-৭০ ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তারা এই বন্দর দিয়ে কয়লা, পাথর, পেঁয়াজ, রসুন, শুঁটকি মাছ ও তাজা ফলমূল আমদানি করতে চান। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতের কাস্টমসের অনাগ্রহের কারণে এসব পণ্য তারা আমদানি করতে পারছেন না। বন্দরে ওয়্যার হাউস একদম রেডি করা আছে। এসব পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশে আনলোড করে রাখার কোনো সমস্যা নেই। এর পরও এসব পণ্য আমদানি করা হচ্ছে না। আর কয়লা ও পাথরের পাশাপাশি বর্তমানে বাংলাদেশে এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী খান ট্রেডার্সের মালিক আতিকুর রহমান খান বলেন, এই বন্দরে ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট (সিএন্ডএফ) স্বল্পতার কারণে ব্যবসায়ীদের কিছু সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া এই বন্দরে মানি একচেঞ্জ অফিস না থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ব্যবসায়ী ও সাধারণ যাত্রী পারাপারে টাকাপয়সা ভাঙাতে সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, এসব সমস্যা দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।

নাকুগাঁও স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল জানান, এই বন্দরের ব্যবসায়ীরা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের আসাম রাজ্যের মরিগাঁও জেলার জাগিরোড এলাকায় স্থাপিত এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ শুঁটকি মাছের আড়ত থেকে শুঁটকি মাছ আমদানি করতে চান। কিন্তু তারা দুই দেশের কাস্টমস অফিসের সহযোগিতা পাচ্ছেন না। তাই ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধান করলে দুই দেশই ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করে লাভবান হবেন।

এ ব্যাপারে নাকুগাঁও স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (এডি-ট্রাফিক) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে বর্তমানে শুধু একটি পণ্য পাথর আমদানি করা হচ্ছে। আসলে একটি পণ্য আমদানি করে বন্দর পরিচালনা করা সম্ভব নয়, তাই এই বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সম্প্রসারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।