Print Date & Time : 26 July 2025 Saturday 1:30 pm

পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না চুয়াডাঙ্গার কৃষক

মফিজ জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা: জমি থেকে পাট কেটে নেওয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। তারপরও চুয়াডাঙ্গার অধিকাংশ কৃষক এখনও পাট কাটা শুরু করেননি। হাতেগোনা কয়েকজন কৃষক যারা শুরু করেছেন তারাও পাট জাগ দেওয়ার জন্য পানি পাচ্ছেন না। অনেক কৃষকের কাটা পাটক্ষেতে পড়ে রয়েছে। আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় এবার চুয়াডাঙ্গার নিচু এলাকাগুলো রয়েছে পানিশূন্য। নদীতে নিয়ে পাট জাগ দেওয়ার ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে যাবে বলে চাষিরা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর চুয়াডাঙ্গায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে। পাট চাষে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলেও এখন পাট কাটা মৌসুমে পানির অভাবে পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। কৃষকরা পাট জাগ দেওয়ার পানি পাচ্ছেন না। অনেক কৃষকের ক্ষেতের আশেপাশে নিচু জমি থাকলেও তা রয়েছে পানিশূন্য।
সদর উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামের কৃষক মিলন বিশ্বাস জানান, পূর্ব পুরুষের আমল থেকে পাটের আবাদ করে আসছেন। তাদের এলাকায় পাট জাগ দেওয়ার জায়গার ভীষণ সংকট। এ সময়ে পুকুরেও পানি থাকে না। গত বছর পুকুরে পাট জাগ মোটর দিয়ে দিতে হয়েছে। এতে উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। ফলে গত বছর পাটের আবাদ করে লোকসান হয়েছে। এ বছর দুই বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। এ বছর পাট বেশ ভালো হয়েছে। উৎপাদন ভালো হবে। তবে, পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পারায় মাঠ থেকে দূরে নদীতে পাট নিয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ বেশি হবে।
একই গ্রামের শিল্টু মণ্ডল জানান, বৃষ্টি বেশি হলেও সমস্যা ছিল না। সময়টা এমন যে, ধান এবং পাটের জন্য পানি দরকার। এ সময়ে বৃষ্টি হলে কৃষকের উপকার হয়। সে অবস্থা এবার নেই।
আলমডাঙ্গা উপজেলার খুদিয়াখালী গ্রামের কৃষক ইসমাইল হোসেন জানান, চুয়াডাঙ্গা অপেক্ষাকৃত উঁচু জেলা। এ জেলায় বন্যা হয় না বললেই চলে। অতিবৃষ্টি হলে পাট জাগ দেওয়ার কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি হয়েছে খুবই কম। মাঠ-ঘাটে কোথাও পানি নেই। এ অবস্থায় পাট কাটার সময় হলেও, পাট জাগ দেওয়ার অসুবিধার কথা ভেবে পাট কাটতে পারছেন না।
এদিকে দামুড়হুদা উপজেলার রামনগর গ্রামের কৃষক কামরুজ্জামান জানান, বিগত দিনের মতো এ বছরও ৬৬ শতক জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। তিনি ইতোমধ্যে পাট কেটে গ্রামের গর্তে জাগ দিয়েছেন। প্রতিনিয়ত স্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিচ্ছেন। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। একই গ্রামের কৃষক শহর আলী জানান, তিনি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। পানির অভাবে তিনি এখনও পাট কাটেননি।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) সুফি মো. রফিকুজ্জামান জানান, এ বছর লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে পাট চাষ। মাঠে পাটের অবস্থাও ভালো। এখন পাট কাটার সময় চলছে। কিন্তু বৃষ্টি নেই। মাঠ-ঘাটেও পানি নেই। কৃষক অপেক্ষায় আছে, বৃষ্টি হলে তারা পাট কাটা শুরু করবে। তবে, কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচালে অল্প খরচে পাট পচানো সম্ভব। এ পদ্ধতিতে পাটের মানও ভালো হয়।