খন্দকার রবিউল ইসলাম, রাজবাড়ী : রাজবাড়ীর ৫ উপজেলায় চলতি বছর পাটের ভালো ফলন হলেও কাক্সিক্ষত বৃষ্টি না হওয়ায় প্রচণ্ড রোদে ক্ষেতেই শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে পাটগাছ। সময়মতো পাট জাগ দিতে না পারায় কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। মাঝে মধ্যে ছিটেফোটা বৃষ্টি হলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। খাল বিলে পানি না থাকায় পাট জাগ দেয়া যাচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
বাধ্য হয়েই কিছু কৃষকরা বিভিন্ন খাল বিলে অপরিষ্কার অল্প পচা পানিতে পাট জাগ দেয়া শুরু করেছেন। পরিবহন খরচ অতিরিক্ত হওয়ায় দরিদ্র কৃষকদের পাট ক্ষেতেই শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে। ফলে পাটের রঙ কালচে হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে বাজারে কাক্সিক্ষত দাম পাচ্ছেন না কৃষক।
কৃষি বিভাগ বলছে, পাট কাটতে না পারায় আমন আবাদ পিছিয়ে যাচ্ছে। আবার আমন আবাদ পিছিয়ে গেলে রবি শস্য আবাদও পিছিয়ে যাবে। ফলে বৃষ্টি না থাকায় জেলায় কৃষির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে রাজবাড়ীর সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়ন ও বালিয়াকান্দির ইসলামপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার অধিকাংশ পাট এখনও কাটা হয়নি। কিছু ক্ষেতের পাট গাছগুলো শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কেউ কাটলেও তা ক্ষেতেই রেখে দিয়েছে পানির অভাবে। আবার কেউ রাস্তার পাশেই রেখে দিয়েছেন গাদি করে। যেসব জমিতে বেলেমাটির পরিমাণ বেশি, সেসব ক্ষেতের পাটগাছ শুকিয়ে গেছে। ভরা মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খালবিল, ডোবা-নালায় পানি জমেনি। রাস্তার পাশে খালের পানিতে পাট জাগ দেয়ার চেষ্টা করছেন কিছু কৃষক।
রাজবাড়ী কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজবাড়ীর ৫ উপজেলায় জেলায় এ বছর ৪৯ হাজার ১২২ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় এক হাজার হেক্টর বেশি। গত দুই বছরে দাম বেশি পেয়ে পাট চাষে ঝুঁকেছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। পাট গবেষণায় খরাসহিষ্ণু রবি-১ জাতের পাটের চাষ বেশি করা হয়েছে। তবে এবারের খরায় পাটক্ষেত বাঁচাতে হিমশিম খাচ্ছেন চাষিরা।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মার্চ মাসের শেষ দিক থেকে পাট বীজ রোপণ করা শুরু হয়। আর পাট কাটা শুরু হয় জুন মাসের শেষ দিক থেকে। জুলাই মাস পর্যন্ত পাট কেটে জমি পরিষ্কার করে সেই জমিতে রোপা আমন ধানের চারা রোপণ করে থাকেন তারা।
সাধারণত রাজবাড়ীতে বৃষ্টির পানিতে নিচু এলাকা ও খাল-বিলে পানি জমে সেখানে পাট জাগ দেয়া হয়। কিন্তু এ বছর জুলাই মাস শেষ হতে চললেও জেলায় তেমন কোনো ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি। আবার গত ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে কোনো বৃষ্টিপাত নেই। ফলে নিচু অঞ্চল ও খাল-বিলে জমে থাকা স্বল্প পানিও শুকিয়ে গেছে। তাই পানির অভাবে কৃষক পাট জাগ দিতে পারছে না। পাঁচ উপজেলাতেই একই অবস্থা।
অনেক কৃষক নালা ও খাদে পানি দিয়ে পাট জাগ দেয়ার চেষ্টা করছেন। তবে অল্প পানিতে এভাবে পাট জাগ দেয়ার কারণে পাটের রঙ খারাপ হচ্ছে। আর খারাপ রঙের পাট বিক্রি হচ্ছে বাজার দর থেকে মণ প্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কমে। এখানেও লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। জেলায় পাট কাটা হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ জমির।
ইসলামপুর ইউনিয়নের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, আমি ৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। কিছু পাট কেটে বাড়ির পাশের একটি পুকুরে পাশে জাগ দিয়েছি। আর জাগ দেয়ার মতো কোনো জাগা নেই।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. বাহাউদ্দিন শেখ বলেন, এ বছর পাট নিয়ে কৃষক বড় সংকটে রয়েছে। অধিকাংশ পাটের জমিতে আমনের আবাদ হয়। তাই দ্রুত পাট কাটতে না পারলে আমন আবাদ ব্যাহত হতে পারে আবার আমন আবাদ দেরিতে হলে রবি শস্যের আবাদে প্রভাব পড়বে। এ জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি অপেক্ষা না করে অল্প পানিতেই পাট জাগ দিতে। এ ক্ষেত্রে পাটের ওপরে পলিথিন বা খড় বিছিয়ে মাটি দিয়ে পাট পানির নিচে ডুবিয়ে দিতে হবে। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।