অদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ: যেদিকে দুচোখ যায়, শুধু পানি, আর পানি। মাঝখান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে আঁকাবাঁকা আঞ্চলিক পিচঢালা পাকা সড়ক। সড়কের দুই পাশ দিয়ে মুক্ত বাতাসে নৌকা ও স্পিডবোটে ঘুরছে ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। একই সঙ্গে সড়ক দিয়ে ছুটে চলছে বিভিন্ন যানবাহন।
মাথার ওপর নীল আকাশ আর পানিতে সূর্যের কিরণের মুগ্ধতায় পানির উপর গড়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান জলডাঙ্গা কফি হাউস অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট।
জলডাঙ্গা কফি হাউস অ্যান্ড রেস্টুরেন্টির অবস্থান সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার উধুনিয়া এলাকায়। এ কফি হাউস ও রেস্টুরেন্টির ব্যাপক পরিচিতি পাওয়ায় বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ভ্রমণপিসাসু ছুটে আসছে এ জায়গায়। এটাকে ভালোবেসে নাম দিয়েছে অনেকে সিরাজগঞ্জের মিঠামইন। মনোমুগ্ধকর এই স্থানটিকে পর্যটন এলাকায় গড়ে তোলার দাবি ভ্রমণপিপাসু ও স্থানীয়দের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার উল্লাপাড়ার শহর থেকে উধুনিয়া ইউনিয়নের প্রায় ২০ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়কটি এক সময় চরম বিপর্যস্ত ছিল। এ সড়ক পথে ছোট ও বড় যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা। পায়ে হেঁটেও চলাচলের উপযোগী ছিল না। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার গত দুই বছর আগে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি সংস্কার ও বর্ধিত করা হয়। এ কারণে অবহেলিত চলনবিলের বুকচিরে নির্মিত আঁকাবাঁকা সড়কটি বদলে দিয়েছে এখানকার চিত্র। বর্তমানে সড়কটি নির্মাণ ঘিরে দুই ধারে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অনেক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কফি হাউসসহ বিভিন্ন রকমের বিনোদন কেন্দ্র। ২০ কিমি আঞ্চলিক সড়কটিতে গঠে উঠেছে জলডাঙ্গা কফি হাউস অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট।

জলডাঙ্গা কফি হাউস অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, উধুনিয়া এলাকায় ৪৫ শতক জায়গায় পানির ওপরে ৫ শতাধিক বড় আকারের প্লাস্টিক ড্রাম দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান এ কফি হাউস অ্যান্ড রেস্টুরেন্টটি। আঁকাবাঁকা আঞ্চলিক সড়কে উড়ন্ত ঈগল। এমন প্রতিকৃতিতে রেস্টুরেন্টটির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। আঞ্চলিক এই সড়কটি থেকে ভাসমান ব্রিজ দিয়ে পানির ওপর প্লাস্টিকে ড্রাম, কাঠ, লোহার আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মাণ করা হয়েছে এ অভিনব ভাসমান রেস্টুরেন্টটি।
প্লাস্টিকের ড্রাম, কাঠ ও লোহার ওপরে বিছানো হয়েছে কাঠের পাটাতন। সেখানে নয়টি ছনের সু-উচ্চ গোল ঘর নির্মা করা হয়েছে। সেই ঘরের ভেতর চেয়ার টেবিল সাজানো আছে। এখানেই কমিউনিটি সেন্টার, পার্টি সেন্টার, পরিচালকের কক্ষ, রান্নাঘর টয়লেট ও পুরো রেস্টুরেন্টে নানা ধরনের ফুলসহ অনেক গাছ বসিয়ে সবুজায়ন আর নান্দনিক রূপ দেয়া হয়েছে। এই রেস্টুরেন্টটিতে একসঙ্গে ৩ শতাধিক অতিথির খাবার সুব্যবস্থা রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে জলডাঙ্গা কফি হাউস অ্যান্ড রেস্টুরেন্টটি পানিতে ভাসে। জমি থেকে পানি নেমে গেলে রেস্টুরেন্টটি উঁচু থাকে। বর্তমানে পানির উপরে ভাসছে।
রেস্টুরেন্টের কর্মচারী শফিকুল ও আলতাব বলেন, এখানে খাবার ব্যবস্থায় রয়েছে চলনবিলের মিঠা পানির দেশি টাটকা বিভিন্ন রকমের মাছ, হাঁস, দেশি মুরগির মাংসসহ দেশি-বিদেশি খাবারের ব্যবস্থা। একই সঙ্গে রয়েছে চা, কফি, কোমল পানি, লাচ্ছিসহ মুখরোাচক খাবার। এই খাবারগুলো অত্যন্ত যতœ সহকারে ভ্রমণপিসাসুদের পরিবেশন করেন।
ঘুরতে আসা মাহবুব শেখ বলেন, জায়গাটা অনেক সুন্দর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বিশুদ্ধ বাতাস সব কিছু মিলে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। এখানে এলে ভালোই লাগে।
ছুটির দিনে ঘুরতে আসা নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজের হƒদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামসুল আলম স্বপন জানান, ছুটির দিনে বন্ধুদের নিয়ে অবসর সময় এখানে আসি। এই রেস্টুরেন্ট এবং জায়গাটি চমৎকার এবং মনোমুগ্ধকর। নিরিবিলি পরিবেশ দেখে আমার খুব ভালো লাগে। ক্ষণিকের জন্য মন হারিয়ে যায় অজানায়।
কীভাবে যাবেন : পানির ওপরে ভাসমান জলডাঙ্গা কফি হাউস অ্যান্ড রেস্টুরেন্টটিতে আসার জন্য উল্লাপাড়া উপজেলা শহর থেকে যে কোনো যানবাহনে উধুনিয়া এলাকায় আসা-যাওয়া যায়। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে ঘরতে আসছে হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু মানুষ।
জলডাঙ্গা কফি হাউস অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের পরিচালক মো. বকুল হোসেন বলেন, আমরা ১২ জন মিলে ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এ রেস্টুরেন্টটি নির্মাণ করেছি। এটি দেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান রেস্টুরেন্ট। এখানে দেশি ও বিদেশি সব রকম খাবার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমাদের রেস্টুরেন্টে প্রায় ২ হাজারের মতো অতিথি আসেন। তাদের সার্বিক নিরাপত্তাসহ সেবা দিয়ে থাকি। আমাদের রেস্টুরেন্টটি আরও দৃষ্টিনন্দন করার কাজ চলছে। আমরা শুধু ব্যবসা নয়, মানুষকে বিনোদন এবং সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।
উধুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বাচ্চু বলেন, শুষ্ক মৌসুমে সবুজ ধান আর সরিষা ফলে মন ভরে যায় এবং বর্ষা মৌসুমে পানি আর পানি দেখতে প্রতিদিন ভ্রমণপিপাসুদের সমাগম হচ্ছে।
উল্লাপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, এখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা ভালোভাবে ঘুরে ফিরে যেতে পারবে সে বিষয়েও নজর রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।