শেয়ার বিজ প্রতিনিধি, পাবনা: পাবনায় আজ মঙ্গলবার শেষ হচ্ছে মাসব্যাপী একুশে গ্রন্থমেলা। আয়োজক ও প্রকাশনা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, এ বছর কোটি টাকার বেশি বই বেচাকেনা হয়েছে মেলায়।
ভাষার মাসে আয়োজিত এ মেলা যেন পাবনাবাসীর প্রাণের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জমজমাট ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। বিকাল হলেই বইপ্রেমীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
জেলার ঐতিহ্যবাহী অন্নদাগোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির উদ্যোগে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পাবনার বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল পৌর মুক্তমঞ্চ চত্বরে এ মেলার আয়োজন করা হয়। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আল নকীব চৌধুরী এ বইমেলার উদ্বোধন করেছিলেন।
এবারের মেলায় বই বিক্রেতা ও প্রকাশনা সংস্থাগুলোর ৩৪টি স্টল ছিল। একাধিক বই বিক্রেতা আর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী জানান, প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার বই বিক্রি করেছেন তারা। শিশুতোষ বই, গল্পের বই, বিভিন্ন ব্যক্তির জীবনী, উপন্যাস ও মুক্তিযুদ্ধের বই বিক্রি হয়েছে বেশি। এবারের বইমেলায় প্রায় কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে বলে তারা দাবি করেন।
পাবনায় মাসব্যাপী গ্রস্থমেলা শুরু হয় আট বছর আগে। পাবনা বইমেলা উদযাপন পরিষদের ব্যানারে এবার টানা চতুর্থ বছর মাসব্যাপী এ মেলার আয়োজন করা হয়।
পাবনার মাসব্যাপী এ মেলার ব্যতিক্রমধর্মী কিছু আকর্ষণের মধ্যে স্কুলশিক্ষক, কলেজশিক্ষক, স্কুলছাত্র, কলেজছাত্র, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, কবি, লেখক, প্রকাশক, শিল্পী, বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠী, ধর্মীয় নেতা, স্কুল ও কলেজের লাইব্রেরিয়ান, মা, বই ব্যবসায়ীদের জন্য ছিল প্রতিদিন আলাদা অলাদা বই পড়া নিয়ে ব্যতিক্রমী আলোচনা সভা।
এছাড়া মেলায় জেলার প্রত্যেক উপজেলার কমবেশি সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনা ছিল মনোঙ্গ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা। তার মধ্যে নৃত্যানুষ্ঠান, নাটক, বাউল-লালনসহ বিভিন্ন ধরনের গান পরিবেশনা, হাতের লেখা, চিত্রাঙ্কন, অভিনয় এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এছাড়া গণশিল্পী সংস্থার আয়োজনে শিশুদের হাতেখড়ি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে তাদের হাতে জীবনের প্রথম আশীর্বাদ সনদ তুলে দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে হাতের লেখা, নৃত্য, সংগীত, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, নাটক, একক অভিনয়সহ নানা ইভেন্টে অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে পুরস্কার ও সনদপত্র। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিচারক ও মেলা কমিটিদেরও পুরস্কৃত করা হয়েছে।
মেলা মঞ্চে সপ্তাহের শেষ দিনে নবীন-প্রবীণ লেখকদের বইয়ের মোড়ক উšে§াচনের ব্যবস্থা ছিল। এবারের মেলাতেও প্রায় ১০০ বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে। মাসব্যাপী এ বইমেলা প্রতিদিন দুপুরের পর থেকেই দর্শক, পাঠকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের আনাগোনায় পুরো ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এত পরিমাণ দর্শকের উপস্থিতি যেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ নিরাপত্তাকর্মীদের পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায় রাখতে হিমশিম খেতে হয়।
গ্রন্থমেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শিবজিত নাগ বলেন, মেলা মানেই মেলা নয়, এই মেলা মানে গ্রন্থমেলা। অর্থাৎ বই ছাড়া কোনো প্রকাশনী সংস্থাকেও স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। প্রত্যেকটি বইয়ের স্টলে ছিল দেশি-বিদেশি খ্যাতিমানসহ নানা ধরনের লেখকদের বই। পাশাপাশি শিশুদের জন্য ছিল নতুন-পুরনো বইয়ের সমাহার। ঢাকার বাইরে একমাত্র আমরাই একটি সুন্দর মেলার আয়োজন করে থাকি। সবার সহযোগিতা পেলে আগামীতে আরও ভালো মেলা উপহার দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।