শাহীন রহমান, পাবনা: একদিকে পাট, অন্যদিকে ধান। পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কের দুইপাশে দুই কৃষিপণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনায় বন্ধ হয়ে গেছে যানবাহন চলাচলের পথ। তৈরি হয়েছে যানজট। এর মধ্যেই হর্ন বাজিয়ে ঢিমেতালে চলছে বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন।
সম্প্রতি সরেজমিন পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কের টেবুনিয়া মোড়ে গিয়ে মেলে এ চিত্র। মূলত এটি মহাসড়ক। তবে বর্তমানে বলা হচ্ছে টেবুনিয়া হাট। এ মহাড়কের কালিকাপুর থেকে পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের ২৪ মাইল পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে এমন আরও সাতটি ঝুঁকিপূর্ণ হাট রয়েছে। হাটগুলো হচ্ছেÑ সদর উপজেলার কালিকাপুর, টেবুনিয়া, পুষ্পপাড়া, আতাইকুলা, সাঁথিয়া উপজেলার বনগ্রাম ও সুজানগর উপজেলার চিনাখড়া, দুলাই ও ২৪ মাইল। হাটগুলোর কারণে প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে যানজট, ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
হাটের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানান, ঘুরে ফিরে সপ্তাহের প্রায় দিনই মহাসড়কে বসছে এসব হাট। এর মধ্যে প্রতিদিন সকাল ও বিকালে কালিকাপুর, টেবুনিয়া, জালালপুর ও ২৪ মাইলে বাজার বসছে। এছাড়া প্রতি বুধ ও রোববার টেবুনিয়া, আতাইকুলা এবং দুলাই, শনি ও মঙ্গলবার বনগ্রাম, শুক্র এবং সোমবার চিনাখড়ায় পাইকারি কেনাবেচার হাট বসছে। এর মধ্যে টেবুনিয়া ও আতাইকুলা হাট সবচাইতে বড়। এ দুটি হাটে ধান, পাটসহ যাবতীয় কৃষিপণ্য জমজমাট বেচাকেনা হয়। ফলে মহাসড়কে তৈরি হয় তীব্র যানজট। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে স্থানীয় লোকজন। এতে মাঝেমধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা।
হাটবাজারের ইজারাদার ও নিয়ন্ত্রকরা জানান, প্রতিটি হাট ও বাজার দীর্ঘদিনের। আগে এগুলো মহাসড়কের পাশের বিভিন্ন স্থানে বসতো। দিনে দিনে সেসব স্থানে দোকানপাট ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি হওয়ায় বর্তমানে হাট-বাজারগুলো মহাসড়কে উঠে এসেছে। পরে হাটবাজারগুলোকে কেন্দ্র করে মহাসড়ক দখল করে বিভিন্ন দোকানপাট তৈরি হয়েছে।
টেবুনিয়া হাটের ইজারাদার ও টেবুনিয়া বাজার কমিটির সভাপতি জহুরুল ইসলাম জানান, এ হাটটি শুরুতে মহাসড়কে ছিল না। সড়কের পাশের সরকারি একটি খোলা জমিতে বসতো। দিনে দিনে সেখানে দোকানপাট ও বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী ইজারার মাধ্যমে দোকানগুলো দখলে রেখেছে। ফলে হাট বর্ধিত হয়ে মহাসড়কে চলে এসেছে। বিষয়টি জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থাপন ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
আতাইকুলা হাটের ইজারাদার ও আর-আতাইকুলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম জানান, মহাসড়কে হাট বসলে তারাও নানা বিড়ম্বনায় পড়েন। কিন্তু বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ বেশি ও স্থান সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা মহাসড়কে আসেন। হাটের জন্য নির্ধারিত স্থান থাকলে এমনটি হতো না।
টেবুনিয়া হাট থেকে রাজশাহীগামী বাসের চালক মকবুল হোসেন জানান, মহাসড়কের হাটগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। গ্রামের সাধারণ লোকজন এসব হাটে আসেন। তারা সড়কে এলোমেলোভাবে চলাচল করেন। ফলে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে।
ট্রাকচালক মমিনুর রহমান জানান, একটি করে হাট পার হতে ৩০-৪০ মিনিট পর্যন্ত লেগে যায়। বেশি যানজট তৈরি হলে এক-দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত বসে থাকতে হয়। এতে একদিকে সময় নষ্ট হয়, অন্যদিকে তেল খরচ বেড়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সমিরন রায় জানান, মহাসড়কের হাট ও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে দীর্ঘদিন ধরে চষ্টা চালানো হচ্ছে। ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। খুব শিগগির আবারও উচ্ছেদ অভিযান ও হাটবাজার ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Print Date & Time : 7 August 2025 Thursday 8:41 am
পাবনায় ৫০ কিলোমিটার সড়কের আট স্থানে হাট
পত্রিকা ♦ প্রকাশ: