বন্যা রানী মহন্ত: একটি শিশু প্রথম জ্ঞান অর্জন করে তার পরিবার থেকে। পরিবারে তার প্রথম সঙ্গী পিতা-মাতা। পিতা-মাতার মুখ থেকে বারবার বের হওয়া বিভিন্ন জ্ঞানের কথা, বিভিন্ন ন্যায়ের কথা, বিভিন্ন মূল্যবোধের কথা শৈশবে তার মনে এমনভাবে গেঁথে যায় যে, ওইরকমভাবে তাদের মন-মানসিকতা গড়ে উঠতে থাকে।
আজকাল অনেক ছেলে কিংবা মেয়ের বিপথে চলে যাওয়ার বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়। পারিবারিক একাত্মতার অভাবের ফলস্বরূপ অনেকে পারিবারিক বন্ধন থেকে বিচ–্যত হয়ে গেছে ভেবে নিজেকে অনেক একা ভাবে। সেজন্য তারা হতাশায় ভোগে এবং একপর্যায়ে তারা আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেছে নেয়। অনেকের ভেতরে আবার পারিবারিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় শিক্ষার অভাব থাকে। তারা পিতা-মাতার কদর বোঝে না কিংবা কদর করতে জানে না, সেই সন্তানগুলোই পিতা-মাতাকে বৃদ্ধ বয়সে দেখে না। তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়। সেজন্য পারিবারিক শিক্ষার বিষয়ে প্রত্যেক বাবা-মাকে তাদের সন্তানদের আরও সচেতন করে তুলতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে পিতা-মাতাকে সহযোগী হতে হবে বিশেষ করে সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে।
পরিবারের বন্ধন হলো পরিবারের ভিত্তি। আর পারিবারিক সুশিক্ষা একটা ছেলে কিংবা মেয়ের সুস্থ মানসিকতার ভিত্তি। একটি ছেলে বা মেয়ের আচরণেই শিক্ষার অনেকাংশ ফুটে ওঠে। একটি শিশু যখন জš§গ্রহণ করে তার মধ্যে কোনোরকম শিক্ষা বিরাজমান থাকে না। ধীরে ধীরে যখন বড় হতে থাকে তখন তাদের মধ্যে পারিবারিক ঐতিহ্য, মূল্যবোধ, ধর্মীয় অনুভূতি প্রভৃতি বড় হতে থাকে। একজন উৎকর্ষ মানুষ গড়তে মানসিক বিকাশ সাধন একটা বড় ব্যাপার। মানবিকতার বিকাশ সাধনও জরুরি। যেহেতু পরিবার থেকে শিক্ষার শুরু হয় সেহেতু পারিবারিক শিক্ষার ভিত্তিটা মজবুত হওয়া ভীষণ দরকার। কেননা অনেক সময় দেখা যায়, অনেক মানুষ ভুল পথে এগোয়, তাদের হিতাহিত বোধ থাকে না, ভালো-মন্দের উপলব্ধি থাকে না তাদের মধ্যে। ভুল শিক্ষার বীজ নিজের মধ্যে রোপণ করতে থাকে। এর ফলে অনেকে অনেক অপরাধের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। এদিকে বাবা-মাকে অনেক সময় সম্মান করতে ভুলে যায়। অবিদ্যা ও অজ্ঞানতার বশবর্তী হয়ে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে পিতা-মাতার প্রতি। তাই সুশিক্ষার বীজ যাতে সন্তানদের মধ্যে রোপণ হতে পারে সেজন্য পারিবারিক শিক্ষাগুলোর খুব বেশি চর্চা করা আবশ্যক, ধর্মীয় বিষয়গুলোর মাহাত্ম্য বোঝা এবং সেগুলো যথাযথ চর্চা করা দরকার। এ বিষয়গুলো যত বেশি চর্চা হবে তত বেশি উচিত-অনুচিতের বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠবে, সুশিক্ষার ধ্যানধারণা তৈরি হবে। মানুষ কোনো ভুল পথে যাওয়ার আগে কাজটি করা উচিত হবে কি না ভাববে এবং তার বিবেককে নাড়া দেবে।
শুধু পারিবারিক মূল্যবোধ জাগ্রত করলেই চলবে না, সঙ্গে পারিবারিক বন্ধন, একাত্মতা, ভ্রাতৃত্বের বোধও জাগ্রত করতে হবে। একাত্মতার গভীরে যখন মানুষ থাকে তার প্রিয়জনদের নিয়ে তখন সে নিজেকে একা ভাবে না, নিজেকে সে পরিবারের অংশ বলেই মনে করে। অনেক সময় দেখা যায়, পরিবারে সবার সঙ্গে সবার বন্ধন দৃঢ় হয় না, বিশেষ করে সন্তানদের সঙ্গে পিতা-মাতার, সেক্ষেত্রে পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের প্রতি একটু উদাসীন থাকেন, সন্তান কোনোকিছু শেয়ার করতে পারে না পিতা-মাতার সঙ্গে। নিজে হীনম্মন্যতায় ভোগে। এ বিষয়ে পিতা-মাতার বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সন্তানদের শারীরিক সুস্থতা ও বিকাশের সঙ্গে মানসিক সুস্থতা ও বিকাশের দিকে মনোযোগী হতে হবে।
একটি শিশুর সুন্দরভাবে গড়ে ওঠার জন্য সহায়ক সুন্দর ও মনোরম পরিবেশ যার মধ্য দিয়ে সে বেড়ে ওঠবে। সুন্দর আচরণ সুন্দর মানসিকতার পরিচায়ক। সবরকম মন্দ-খারাপ চিন্তাভাবনা থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনতে পারে তার মধ্যে দিনের পর দিন বেড়ে ওঠা সুশিক্ষার বীজগুলো। তাই পারিবারিক মূল্যবোধ, পারিবারিক শিক্ষা, পারিবারিক দৃঢ়তা ও বন্ধনকে সদা জাগ্রত করতে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়