Print Date & Time : 10 September 2025 Wednesday 8:41 pm

পাসপোর্ট অফিসে জনগণের ‘উহ’ শব্দটিও শুনতে চাই না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাসপোর্ট অফিসে সেবা নিতে আসা জনগণের সঠিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে, তাদের ‘উহ’ শব্দটিও শুনতে চান না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, আপনারা যত সেবা দেবেন ততই আপনাদের সুনাম বাড়বে।

গতকাল রোববার রাজধানীর আফতাবনগরে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঢাকা পূর্ব (আফতাবনগর) ও ঢাকা পশ্চিম (মোহাম্মদপুর) এবং পাসপোর্ট বাতায়নের (কল সেন্টার) শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। 

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন যে বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল দেশ হিসেবে গড়ে তুলবেন। এ ঘোষণার পর থেকে আমরা এমআরপি পাসপোর্ট  হাতে নিলাম। এমআরপি প্রকল্প হাতে নিয়ে আমরা অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছিল। সব প্রতিবন্ধকতা সামলে তখন এমআরপি চালু হয়েছিল। এরপর আমরা ই-পাসপোর্টের জগতে পা রাখি। আমাদের পাসপোর্টের মানও ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। আগে যেমন আমাদের পাসপোর্টের মান নিচের দিকে ছিল, এখন ধীরে ধীরে উন্নতি করে এটা ওপরের দিকে যাচ্ছে। আমাদের পাসপোর্ট এরই মধ্যে বিশ্বমানের স্বীকৃতি পেয়েছে এবং সামনে আরও এগিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাত্রা শুরু করেছি। ই-পাসপোর্ট এবং ইমিগ্রেশনের ই-গেট  স্মার্ট বাংলাদেশের একটি ইঙ্গিত বহন করছে। এছাড়া খুবই দ্রুত ই-ভিসাও চালু হতে যাচ্ছে। আমরা প্যাসেঞ্জার অ্যাডভান্স ইনফরমেশনও চালু করতে যাচ্ছি। যদিও এটি আমাদের মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নয়, সিভিল এভিয়েশনের পক্ষ থেকে প্যাসেঞ্জার অ্যাডভান্স ইনফরমেশন চালুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটা চালু হলে কোনো যাত্রী টিকিট কাটলে আমরা জানতে পারবÑকে বাংলাদেশে আসছেন বা কে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাচ্ছেন। আমরা দেশের ৭১টি পাসপোর্ট অফিস এবং বিদেশে মোট ৩২টি জায়গা থেকে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করতে পেরেছি। বিদেশে যেখানে আমাদের পাসপোর্ট অফিস আছে, তার প্রতিটিতেই আমরা দ্রুত ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করব। 

অনুষ্ঠানে উদ্বোধন হওয়া পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই নতুন দুটি পাসপোর্ট অফিস থেকে জনগণ সুবিধা পাবে এবং সেবা গ্রহণ করবে। এখানে যারা কাজ করবেন, তাদের উদ্দেশে আমি বলব, আপনারা জনগণের সেবা করবেন এবং জনগণের সেবার জন্যই কিন্তু আপনারা। কাজেই পাসপোর্ট সেবা নিতে আসা জনগণের ‘উহ’ শব্দটিও আমরা শুনতে চাই না। আপনারা যতই তাদের সেবা দেবেন ততই আপনারা সুনাম অর্জন করতে পারবেন।

ইমিগ্রেশনে ই-গেট চালু হয়েছে, সেখানে কোনো যাত্রী যেতে চাইলেও ইমিগ্রেশন পুলিশ সদস্যরা যাত্রীদের নিরুৎসাহিত করছে, সেখানে অনেকটা সমন্বয়হীনতা রয়েছে, এ বিষয়ে পদক্ষেপ কীÑসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা এখনও ট্রায়াল বেসিসে চলছে। যে কোনো কিছু চালুর আগে ছোটখাটো সমন্বয়হীনতা হয়ে থাকে। আপনি নতুন বাড়িতে উঠলেও দেখবেন যে লাইট ঠিকমতো জ্বলে না, সুয়ারেজে পানিটা ঠিকমতো পাস হচ্ছে না। আমাদের নজরে যেগুলো আসছে, সেগুলো আমরা ইমিডিয়েটলি ব্যবস্থা নিচ্ছি। ই-গেট যাতে সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, সে বিষয়টি অবশ্যই দেখব। 

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নূরুল আনোয়ারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজির আহমেদ, ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. সাদেক খান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী। 

এদিকে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ হিসেবে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর দেশের নাগরিকদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর, নিরাপদ ও উন্নত মানের পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন সেবা এবং বাংলাদেশে আগত সব বিদেশি নাগরিকের  জন্য উন্নত মানের ভিসা সেবা দিচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঢাকা পূর্ব (আফতাবনগর), ঢাকা পশ্চিম (মোহাম্মদপুর) ও কল সেন্টারের (পাসপোর্ট বাতায়ন-১৬৪৪৫) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। 

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, এরই মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৬৪টি জেলায় মোট ৬৯টি আঞ্চলিক অফিস থেকে দেশের নাগরিকদের পাসপোর্ট সেবা দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে সাতটি বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস থেকে বাংলাদেশে আগত বিদেশি নাগরিকদের ভিসা সেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বেনাপোল ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ৪৪টি ই-গেট স্থাপনের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। গতকাল ঢাকায় নতুন দুটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস আন্ষ্ঠুানিক উদ্বোধন করার মধ্য দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসসংখ্যা হলো ৭১টি। 

আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ঢাকা পূর্বের (আফতাবনগর) আওতাধীন থানাসমূহ হলোÑমুগদা, সবুজবাগ, শাহাজাহানপুর, খিলগাঁও, রামপুরা, মতিঝিল, পল্টন, হাতিরঝিল ও বাড্ডা। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঢাকা পশ্চিমের (মোহাম্মদপুর) আওতাধীন থানাগুলো হলো সাভার, ধামরাই, মোহাম্মদপুর, আদাবর, দারুস-সালাম, শাহ আলী, হাজারীবাগ ও নিউমার্কেট। একইসঙ্গে পাসপোর্ট বাতায়ন তথা কল সেন্টারের মাধ্যমে যে কোনো নাগরিক বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে ১৬৪৪৫ এবং প্রবাস থেকে ০৯৬৬৬৭১৬৪৪৫ নম্বরে কল করে পাসপোর্ট ও ভিসা সেবা-সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্যসেবা পাবেন।