হ্লাসিং থোয়াই মারমা, বান্দরবান
বান্দরবানের শুরু হয়েছে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব বিজু ও বিষু। বিজুকে ঘিরে সাঙ্গু নদীর পানিতে ভাসছে নানা রঙের ফুল এবং প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনা করেন বিশ্ব শান্তির কামনায় চাকমা, চঞ্চঙ্গ্যা সম্প্র্রদায় লোকেরা। গতকাল শনিবার সকালে বান্দরবান রোয়াংছড়ি বাস স্টেশন এলাকার সাঙ্গু নদীর ঘাটে রান্যাফুল সোস্যাল অ্যান্ড কালচারাল সোসাইটির উদ্যোগে একদল তরুণ-তরুণী নদীতে ফুল ভাসান। এ ফুল বিজু পালনের মাধ্যমে তারা সর্বস্তরের মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
সকালে জেলার ঐতিহ্যবাহী সাঙ্গু নদীর বুকে ফুল ভাসিয়ে সবাই মিলে বরণ করে নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহৎ সামাজিক উৎসব বিজু ও বিষু। চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্র্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবের সূচনা হয় গঙ্গার উদ্দেশ্যে ফুল নিবেদনের মধ্য দিয়ে।
গতকাল সকাল থেকে সাঙ্গু নদীর তীরে ভিড় জমান জেলার হাজারো চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের নারী, পুরুষ ও শিশুরা। ভোর বেলা বিভিন্ন রঙের ফুল সংগ্রহ করে কলাপাতায় সাজিয়ে সাঙ্গু নদীর তীরে এসে ফুল ভাসিয়ে, মোমবাতি জ্বালিয়ে বিগত বছরের ভুলভ্রান্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং নতুন বছরে সুখ-শান্তি কামনা করে গঙ্গার উদ্দেশ্যে ফুল ভাসিয়ে দেন।
দীর্ঘদিন ধরে ঐতিহ্যগতভাবে ১২ এপ্রিল নদীতে পূজা ও ফুল নিবেদনের মাধ্যমে বান্দরবান জেলার চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় এই উৎসব পালন করে আসছেন। ১৩ এপ্রিল পালিত হয় মূল বিজু। ওই দিন ঘরে ঘরে নানা রকম খাবারের আয়োজন করা হয়। একে অপরের বাড়িতে নিমন্ত্রণ ছাড়াই যাওয়া যায়। যদিও আধুনিক সময়ে অনেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে নিমন্ত্রণ করেন। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন ও বয়োজ্যেষ্ঠদের দাওয়াত করে আপ্যায়ন করা হয়।
চাকমা খাবারের মূল আকর্ষণ হলো ‘পাচন’ তরকারি। যা শতাধিক সবজি, মাছ ও শুঁটকি দিয়ে তৈরি করা হয়। ১৪ এপ্রিল তরুণ-তরুণীরা গুরুজনদের গোসল করিয়ে তাদের আশীর্বাদ গ্রহণ করে। একই দিনে ভিক্ষু-সংঘকে ‘ফাং’ (নিমন্ত্রণ) জানিয়ে ঘরের মঙ্গল কামনায় মঙ্গল সূত্র শ্রবণ করে থাকেন। এছাড়া সাধ্য অনুসারে বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরি করে বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এমনকি কারও সঙ্গে অতীতের বৈরিতা থাকলে এদিন একে অপরকে ক্ষমার মাধ্যমে নিজের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেন
ফুল ভাসাতে আসা আদ্রিতা চাকমা বলেছেন, পুরোনো বছরের সব মন্দ, কালিমা ঝেরেমুছে ক্ষমা চেয়ে বিদায় ও নতুন বছরের মঙ্গল কামনা করে ফুল বিজুর দিনে ফুল ভাসানো হয়। ফুল বিজুর দিনে ফুলের মালা গেঁথে ঘরবাড়ি সাজিয়ে তোলা হয়। বাড়িঘরের সবকিছু ধুয়েমুছে পরিচ্ছন্ন করে রাখা হয়।
তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের তরুণীরা বলেন, সবাই যেন সুখে শান্তিতে থাকে এজন্য আমরা নদীতে ফুল ভাসাই। এ দিনটা আমাদের জন্য খুবই খুশির দিন। গত দু’ বছর আমরা করোনার জন্য ফুল ভাসাতে পারিনি। এবারে আমরা এ ফুল বিজু পালন করতে পেরে আরও বেশি খুশি লাগছে।
বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার জানিয়েছেন, উৎসবকে ঘিরে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উৎসব স্থলে নিয়োজিত থাকছে পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে দুই স্তর বিশিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
