Print Date & Time : 15 August 2025 Friday 8:29 pm

পাহাড়ে চাই ঝুঁকিমুক্ত জীবন

 

পাহাড়ধসে চট্টগ্রাম বিভাগের চার জেলায় সেনাবাহিনীর সদস্যসহ প্রায় দেড়শ মানুষের মৃত্যুতে আমরা যেমন শোকাহত, তেমন উদ্বিগ্ন। নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানাই সমবেদনা। একই সঙ্গে প্রত্যাশা থাকবে, শোক সামলে তারা যেন দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। এ ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন তাদের যথাযথ চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমরা এ কারণে উদ্বিগ্ন যে, কয়েক বছর ধরে এমনটি ঘটছে অব্যাহতভাবে। তাতে প্রাণহানি যেমন ঘটেছে, তেমনি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সম্পদের। ফি বছর প্রাণ ও সম্পদের এমন ক্ষতি কারও কাম্য হতে পারে না। যেসব পাহাড়ে ধসের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো গঠিত মাটি দিয়ে। অনেকে মনে করেন, পাহাড় কাটার জন্যই নেমে এসেছে এ দুর্যোগ। এটাকে অনেকটা ‘সরল’ ব্যাখ্যা বলেই মনে হয়। আমরা চাইবো, এর পেছনে অন্য কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে কি না, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।

বলা বাহুল্য, পাহাড়ধসে প্রাণহানি হলে এ ব্যাপারে কথা যতটা শোনা যায়, অন্য সময়ে তেমন হয় না। মনে হয়, ওই সময়ে তা ভুলে যান নীতিনির্ধারকরাও। এটা কেন করা হয়, আমরা জানি না। সচেতনতা সৃষ্টিসহ অন্যান্য পদক্ষেপ ওই সময়ে অব্যাহত থাকলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো কিছুটা হলেও সহজ হতো। আশা করি, অন্যান্য পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যেসব মানুষ বাস করছে, এ ঘটনার পর তাদেরও সরিয়ে নেওয়া হবে। তাহলে আসন্ন বর্ষা ঘিরে এমন দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে। মনে রাখতে হবে, বিকল্প বাসস্থান নিশ্চিত করা না গেলে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকেও মানুষকে সরানো খুব কঠিন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নীতিও দেখতে চাইবো আমরা।

বিভিন্ন পাহাড়ের গায়ে বাসকারী অসংখ্য মানুষের জীবন যে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে, তা বলা বোধহয় ভুল হবে না। বাসস্থান মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্তর্গত। এমনভাবে বসবাস নীতিগত ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতাই স্পষ্ট করে। বস্তুত ওই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, ঝুঁকিমুক্ত আবাস নির্মাণের ব্যবস্থা তাতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কি না, জানা নেই। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তো বটেই, জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বৈষম্য হ্রাসেও এমন পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এটা করা গেলে তাদের উন্নয়নকেও করা যাবে টেকসই।

জানা গেছে, প্রবল বর্ষণে রাজধানীর সঙ্গে দুর্যোগকবলিত বেশ কিছু এলাকার সড়ক যোগাযোগ হয়ে পড়েছে বিচ্ছিন্ন। ফলে উদ্ধারকারী বাহিনী সেখানে পৌঁছতে পারছে না। পাঠানো যাচ্ছে না ত্রাণ। বস্তুত দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষকে বাঁচাতে সবার আগে জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা; আহতদের চিকিৎসা সেবাসহ সবাইকে খাদ্য ও পানীয় জোগানো। স্বাভাবিক যাতায়াতব্যবস্থা ভেঙে পড়লে এটা জোগানো কঠিন হয়ে পড়ে অনেকটাই। আশা করি, এ অবস্থায় বিকল্প চিন্তার পাশাপাশি সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন নীতিনির্ধারকরা। দেশের এ অঞ্চলের প্রতি আকর্ষণ রয়েছে পর্যটকদের। এমন কেউ এ দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে কি না, আমরা জানি না। নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করলে এটা বের করা সহজ হবে। এখন পর্যন্ত যারা নিখোঁজ রয়েছেন, তাদের উদ্ধারেও চালাতে হবে জোর প্রচেষ্টা। মনে রাখতে হবে, ফি বছর পাহাড়ধসে বিপুল মানুষের প্রাণহানি ওই এলাকার প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ কমাতে পারে। অর্থনীতির জন্য এটা হবে বড় ক্ষতি। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ওই অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও মানুষের আয়ে। মানুষকে এজন্য ভুগতে হতে পারে বছরভর। দুর্যোগ ও নানা সীমাবদ্ধতায় জীবন পরিচালনাকারী পাহাড়বাসীর জীবনে বড় ধরনের ও দীর্ঘমেয়াদি সংকট আমরা দেখতে চাইবো না।