নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পিকে হালদার) ১২ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় কাগুজে প্রতিষ্ঠান দিয়া শিপিং লিমিটেডের নামে এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ৪৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। আলোচিত পিকে হালদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে গতকালের মামলা নিয়ে মোট ৪০টি মামলা দায়ের করেছে দুদক।
গতকাল দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ সংস্থাটির সহকারি পরিচালক রাকিবুল হায়াত বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার আসামিরা হলেনÑএনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি ও পলাতক আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার, দিয়া শিপিং লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিব প্রসাদ ব্যানার্জি, পরিচালক পাপিয়া ব্যানার্জি, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান এমএ হাফিজ, সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম, পরিচালক অরুণ কুমার কুণ্ডু, অঞ্জন কুমার রায়, মো. মোস্তাইন বিল্লাহ, উজ্জল কুমার নন্দী, সত্য গোপাল পোদ্দার ও এফএএস ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহরিয়ার।
মামলার এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে অবৈধ উপায়ে ভুয়া ও কাগুজে প্রতিষ্ঠান দিয়া শিপিং লিমিটেডের নামে ঋণ হিসেবে ৪৪ কোটি টাকা গ্রহণ করে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণীতে বলা হয়েছে, দিয়া শিপিং লিমিটেডের এমডি শিব প্রসাদ ব্যানার্জি ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অন্য আসামি মো. রাসেল শাহরিয়ার বরাবর ৬ বছরের জন্য ৪৪ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেন। ওই ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে তিনি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ৩২ ডেসিমেল জমি দেখান। ঋণ প্রস্তাব বোর্ডে অনুমোদনের জন্য ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর উপস্থাপন করেন রাসেল। পরে ১৬৩তম বোর্ড সভায় ঋণ প্রদানের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। বোর্ড সভায় উপস্থিত হয়ে কোনো প্রকার আপত্তি ছাড়াই ঋণ প্রদানের জন্য পরিচালক এমএ হাফিজ, ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম, তৎকালীন পরিচালক মো. সিদ্দিকুর রহমান, পরিচালক উজ্জল কুমার নন্দী, অঞ্জন কুমার রায়, অরুণ কুমার কুণ্ডু, মো. মোস্তাইন বিল্লাহ ও সত্য গোপাল পোদ্দার মো. রাসেল শাহরিয়ারকে দায়ী বলে মনে করছে দুদক।
ঋণ অনুমোদনের পর ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দিয়া শিপিং লিমিটেডের অনুকূলে ঋণ ছাড় করা হয়েছে। পরবর্তীকালে তা আত্মসাৎ করে পিকে হালদার সিন্ডিকেট, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ’র তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
বর্তমান মামলার অন্যতম আসামি এফএএস ফাইন্যান্সের সাবেক এমডি রাসেল শাহরিয়ারকে ১৫ ফেব্রুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি টিম মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।
এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে এক হাজার ৩০০ কোটি আত্মসাতের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করা হয়। এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৫টি মামলা করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। সব মামলায় পিকে হালদারকে প্রধান আসামি করা হয়।
এর আগে পিকে হালদারের অন্যতম সহযোগী রতন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গত ১৭ মে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করে দুদক। রতন কুমার বিশ্বাস আনান কেমিক্যাল লিমিটেডের পরিচালক ও আরবি এন্টারপ্রাইজের মালিক। মামলায় তার বিরুদ্ধে প্রায় ৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
সংস্থাটির অনুসন্ধান শুরুর চার মাস পর প্রথম মামলা হয় পিকে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন সংস্থাটির উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন। পরবর্তী সময়ে দুদকের আরেক উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি টিম আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। ওই টিম মোট ৩৮টি মামলা করে।
এছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার চার্জশিট ২০২১ সালের নভেম্বরে দাখিল করা হয়। যেখানে ৪২৬ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগে পিকে হালদারসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
মামলার তদন্তকালে এখন পর্যন্ত ১২ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পিকে হালদারের সহযোগী শঙ্খ বেপারী, রাশেদুল হক, অবান্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাইসহ ১০ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া এক হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ অবরুদ্ধ ও জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে আদালতের মাধ্যমে ৬৪ জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। একই ইস্যুতে ৩৩ ব্যক্তির সম্পদ বিবরণীর নোটিস জারি করা হয়েছে।