Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 1:25 am

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নেও সংস্কার বিবেচনায় নিন

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘জাতীয় এসডিজি রিপোর্ট (ভিএনআর) ২০২৫: পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশার অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, সরকার যেসব সংস্কার কমিশন করেছে, সেখানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সঠিক প্রতিনিধিত্ব নেই। সংস্কার হবে আর পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নতি হবে না। তাহলে ওই সংস্কার দিয়ে জনগণ কী করবে?’

আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে যে একটি মানবিক মর্যাদাশীল রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছিল, জনগণের কোনো অংশকে বাদ দিয়ে তা সম্ভব নয়। সবাইকে নিয়েই এগোতে হবে। ধর্ম, গোত্র, জাতি নির্বিশেষে সবার মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ সুবিধা দেয়ার কথা সংবিধানেই বলা আছে। কিন্তু ৫৪ বছর ধরে যারা ক্ষমতায় ছিলেন এবং আছেন, তারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এ কথা যদি ড. দেবপ্রিয়র মতো একজন প্রাজ্ঞ অর্থনীতিবিদ বলেন, তাহলে সেটির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।

বিভিন্ন সময় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রকাশিত গবেষণায় দেখা যায়, প্রান্তিক পর্যায়ের জনগোষ্ঠী বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণায় মূলত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার, দলিত, চা-বাগানশ্রমিক, হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনকথা উঠে এসেছে। তাদের বাইরেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আছে। রাষ্ট্রের কর্তব্য হলো সব নাগরিকের প্রতি সমান দৃষ্টি, যা অনেক ক্ষেত্রে উপেক্ষিত থাকে। সরকারি কর্মকর্তাদের অধিকাংশের দৃষ্টিভঙ্গি পক্ষপাতদুষ্ট এবং দুর্বলকে তারা উপেক্ষার চোখে দেখেন। ফলে বাজেট বা সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচিতে এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য যে সামান্য বরাদ্দ থাকে, তাও তারা পান না। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেকেই জানেন না, সরকারি সেবা পেতে কোথায় যাবেন।

ব্যক্তিগত কিংবা প্রতিষ্ঠানিক যেভাবেই বিবেচনা করা হোক না কেন দেখা যায়, আইনগতভাবে সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিচয় ও তাদের ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি নেই। গবেষণা অনুযায়ী, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩’ এবং ‘নীতিমালা, ২০১৫’-এ অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার ভুক্তভোগীদের প্রতিবন্ধিতাসহ ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে সরাসরি নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়নি।
বৈষম্য রোধে টিআইবি উত্থাপিত ১০ দফা সুপারিশের মধ্যে ছিল সরকারি প্রতিষ্ঠানের গণশুনানিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যা নিয়ে আলাদা সময় বরাদ্দ করা এবং তাদের সমস্যা প্রকাশে উৎসাহিত করা; স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণ নিশ্চিতে সংরক্ষিত প্রতিনিধিত্ব সদস্যপদ তৈরি করা। এ ছাড়া সংবিধান প্রতিশ্রুত অন্তর্ভুক্তি, বৈষম্যহীন ও জবাবদিহিমূলক সেবা নিশ্চিত করার কথাও সুপারিশে আছে।

সংবিধানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা থাকলেও তার যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া দুঃখজনক। ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন না করতে পারলে তা কখনোই সফল হবে না। আমাদের প্রত্যাশা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে অর্থবহ সংস্কারের উদ্যোগ নেবে।