মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: আসন্ন বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব হবে এমন প্রত্যাশা করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ে বিএসইসির বিভিন্ন সংস্কার এবং অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজার নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য শোনা গেছে। সে কারণে বাজেটে পুঁজিবাজার তথা বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো কিছু থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যদিও বিষয়টি নিয়ে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টদের দ্বিমতও রয়েছে। তাদের অভিমত, এবার বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে যেসব প্রস্তাবনা রয়েছে তা গতানুগতিক। ফলে এটা পুঁজিবাজারের খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। তারা পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখা যৌক্তিক বলে মনে করছেন।
আসন্ন বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা স্টক একচেঞ্জে (ডিএসই)। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে ডিমিউচুয়ালাইজড এক্সচেঞ্জের কর অবকাশ সুবিধা বৃদ্ধি করা, করমুক্ত আয় ও করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের পরিমাণ বাড়ানো, বহুজাতিক কোম্পানি ও স্থানীয় ব্লু-চিপ কোম্পানিগুলোকে এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তি উৎসাহিত করতে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করের ব্যবধান বাড়ানো।
পুঁজিবাজারের স্বার্থে আরও কয়েকটি প্রস্তাব করে ডিএসই। সেগুলো হচ্ছে লভ্যাংশ আয়ের করমুক্ত সীমা ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে এক লাখ টাকা, স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের কাছ থেকে উৎসে আয়কর হার ০.০৫ শতাংশ থেকে পূর্বের ০.০১৫ শতাংশ নির্ধারণ, আইপিওতে ২০ শতাংশ শেয়ার ইস্যু করা কোম্পানিকে এক বছরের পরিবর্তে তিন বছর ১০ শতাংশ হারে কর রেয়াত সুবিধা দিতে বলেছে ডিএসই।
এদিকে আসন্ন বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করের হার পাঁচ শতাংশ কমানোর দাবি জানিয়েছে সিএসই। নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর তিন বছর করমুক্ত রাখতে বলেছে সিএসই। তাদের পক্ষ থেকে করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা এক লাখ টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি উৎসাহিত করতে প্রথম তিন বছর ‘শূন্য’ এবং পরের বছরগুলো ১০ শতাংশ হারে করহার নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে সিএসই।
একইভাবে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার বিক্রির জন্য সিএসইকে কর অব্যাহতির সুযোগ এবং স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের কাছ থেকে উৎসে আয়কর হার ০.০৫ শতাংশ থেকে পূর্বের ০.০১৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে বাজেটে মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন বিএমবিএ নেতারা। এছাড়া লভ্যাংশ আয়ের করমুক্ত সীমা ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে মূলধনি লাভের ওপরে ১০ শতাংশের পরিবর্তে পাঁচ শতাংশ করহার এবং কমপক্ষে ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিকে ১০ শতাংশ কর রেয়াত সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করেছে তারা।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, আমি মনে করি এই বাজেটে বিনিয়োগকারী তথা পুঁজিবাজারের স্বার্থের কথা বিবেচনা করা হবে। বাজেটে এমন কিছু থাকবে না যা পুঁজিবাজারের জন্য নেতিবাচক হয়। অর্থমন্ত্রীর ওপর বিশ্বাস রেখে বলতে পারি তিনি পুঁজিবাজারের উন্নয়নে যেসব প্রণোদনা লাগবে বাজেটে তা রাখবেন।
একই প্রসঙ্গে ডিএসইর অন্য একজন কর্মকর্তা বলেন, এবার বাজেটে যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাতে খুব বেশি নতুনত্ব নেই। আমার মনে হয় বাজেটে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকলে তাতে বিনিয়োগকারীরা বেশি উপকৃত হবেন।
প্রসঙ্গত, আগামী ১৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।