Print Date & Time : 28 August 2025 Thursday 3:22 am

পুঁজিবাজারের উন্নতি না হলে অর্থনীতি পিছিয়ে যাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ক্যাপিটাল মার্কেটের উন্নতি না হলে অর্থনীতির একটা অংশ পিছিয়ে যাবে বলে মনে করেন পুঁজিবাজারের উন্নয়নে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপ না করলে আমাদের অর্থনীতির একটা অংশ পিছিয়ে যাবে, অর্থাৎ সামগ্রিক উন্নতি হবে না। এখন পর্যন্ত কী হয়নি, সেটা না ভেবে কতদূর এগিয়েছি, আরও কতখানি গেলে আমরা সবাইকে নিয়ে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাব, সেটা ভাবতে হবে, সেই প্রক্রিয়াটা ঠিক করতে হবে।’

গত বুধবার চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হোটেল র‌্যাডিসন ব্লু’তে মতবিনিময় সভা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী। এ সময় এসব কথা বলেন তিনি। ওই সভায় বর্তমান পুঁজিবাজারের সমস্যা, এর উত্তরণ এবং একে সমৃদ্ধ করার জন্য ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন-বিএসইসির কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর, ফারজানা লালারুখ, সিএসইর চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান, পরিচালক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম, পরিচালক শাহজাদা মাহমুদ চৌধুরী, সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এম সাইফুর রহমান মজুমদার প্রমুখ। এ ছাড়া সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসইসি ও সিএসইর অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সভায় ১১টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑটিকে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, বিএসআরএম গ্রুপ, কেডিএস গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, ফারুক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, দৈনিক আজাদি লি., নাহার অ্যাগ্রো কমপ্লেক্স লি., খাতুনগঞ্জ চেম্বার, জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল চট্টগ্রাম, বিএসএ অ্যাপারেলস লি., দি লাকি অ্যাপারেলস ইন্টারন্যাশনাল (প্রা.) লি. এবং এপিক প্রোপারটিজ লি.।

ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের বক্তব্য শোনেন এবং তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যে ধরনের পরিবর্তন আশা করছেন, আমাদের কাজ করার উদ্দেশ্যও তাই। কারণ সংস্কার চলমান এবং আজকের এই আলোচনাও এর অংশ। একটি দেশ ও তার সামগ্রিক অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তার ব্যবসায়িক কমিউনিটির বিশাল ভূমিকা রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ঠিক করতে হবে, সেটা অর্জনের জন্য সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়াটাই জরুরি। আর সেজন্য আপানাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।’

তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশ ২০ বছরে আমূল পরিবর্তন করেছে, আমরা ৫০ বছর পার করেছি, কিন্তু অগ্রগতি ততখানি হয়নি। আমাদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরাও পারবÑএই মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’

সভায় প্রস্তাবিত বিষয়গুলো হলো, ব্যবসার জন্য সামগ্রিক ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা; ব্যবসা করার জন্য বিদ্যমান পলিসিগুলোর পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও প্রয়োজনে নতুন করে তৈরি করা; ব্যবসার জন্য পরিবেশ অর্থাৎ পলিসি, প্রক্রিয়া ও প্রয়োগিক সব ক্ষেত্রে ব্যবসাবান্ধব হওয়া জরুরি। ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে, তখন স্বাভাবিকভাবে অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে; দেশে ফরেন ডিরেক্ট ইনেভেস্টমেন্ট কিংবা পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আসার জন্য সর্বস্তরের (সব সংশ্লিষ্ট স্টেকদের) পদ্ধতিগুলো সহজ করতে হবে; ভালো ভালো সরকারি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনতে হবে; বিদেশি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার জন্য পলিসি থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে পদ্ধতিকে সহজ করতে হবে এবং স্বল্প সময়ে করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; স্টক এক্সচেঞ্জ, রেগুলেটরি সংস্থা, সব স্টেকগুলোকে যে কোনো কাজের জন্য সম্মিলিতভাবে একই প্ল্যাটফর্মে থেকে কাজ করতে হবে যেন ফান্ডামেন্টাল/মৌলিক ব্যাপারগুলোর একটি ধারাবাহিক সিস্টেমে থাকে, তবে কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যাবে; যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স এমনভাবে কার্যকর করা দরকার যেন প্রসেসকে ঠিক রেখে প্রতিটি কাজ দ্রুত সময়ে সম্পন্ন হয়; পুঁজিবাজার ভাইব্রেন্ট করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণ করার সুযোগ বাড়াতে হবে, পণ্য দিয়ে সমৃদ্ধ করতে হবে এবং অর্থনীতির গতিশীলতার বিবেচনায় কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

সিএসই এরই মধ্যে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ স্থাপনের জন্য ফিজিবল স্টাডি করেছে, যেখানে ব্যবসায়িক কমিউনিটি অংশগ্রহণ করেছে, কিন্তু এখনও এক্সচেঞ্জ চালু হয়নি। কেন হয়নি এবং কবে হতে পারে, সে ব্যাপারে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সে বিষয়েও মতবিনিময় সভায় অনুরোধ করা হয়েছে।