সরকার পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কার নিশ্চিত করতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছে। প্রধান উপদেষ্টা দেশের উন্নয়ন ও সংস্কার তথা পরিবর্তনের জন্য কাজ করছেন। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন না হলে দেশ এগোতে পারবে নাÑ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসির ভবনে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বুধবার তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় দেশের কল্যাণের স্বার্থে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কার নিশ্চিত করার আশ্বাসও দেন তিনি।
পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত মতামত ও প্রস্তাব তুলে ধরার জন্য বিএসইসি ও বাজার অংশীজনদের ধন্যবাদ দেন তিনি। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন, সংস্কার ও প্রতিবন্ধকতাগুলোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট লিখিত প্রস্তাব আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কমিটির কাছে পাঠানোর অনুরোধও জানান ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘শুধু বিদেশি অনুদাননির্ভর না হয়ে দেশের উন্নয়নের জন্য যে ফান্ড বা বিনিয়োগ প্রয়োজন, তা দেশের মধ্যে থেকেই সংগ্রহ করতে হবে। সেজন্যই দেশের পুঁজিবাজারের উন্নতি দরকার। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সবাই একসঙ্গে পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য কাজ করব।’
পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘দেশের পুঁজিবাজার গত ১৫ বছরে ভালো কোম্পানি পায়নি। ভালো কোম্পানিকে বাজারে নিয়ে আসাও চ্যালেঞ্জ। ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তির জন্য বিএসইসি চেষ্টা চালাচ্ছে। পুঁজিবাজার সংস্কার টাওফোর্সের সুপারিশের আলোকে খুব দ্রুতই পাবলিক ইস্যু রুলসের সংস্কার করা হবে, যা ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।’
বিএসইসি সূত্র জানিয়েছে, পুঁজিবাজারের অংশীজনরা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি, টার্নওভারের ওপর উৎসে কর কমানো, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের পার্থক্য বৃদ্ধি, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে নেগেটিভ ইকুইটির সমাধান, ভালো ও মৌলভিত্তিসম্পন্ন সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা, পণ্যে বৈচিত্র্য আনা, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বাস্তবায়ন, বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারের বাজার কাঠামো আধুনিকায়ন, সিসিবিএলের বাস্তবায়ন, সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয় বৃদ্ধি, ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন রিভিউ, বিভিন্ন প্রণোদনা বা সুবিধার মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে আগ্রহী করা, পুঁজিবাজারে অনিয়ম ও কারসাজি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, লভ্যাংশ আয়ের ওপর কর রেয়াত বৃদ্ধি, মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগে রিবেট সুবিধা বৃদ্ধি, মিউচুয়াল ফান্ডের আইপিও কোটা বৃদ্ধি, বিনিয়োগ নীতিমালা প্রস্তুত করা, পুঁজিবাজারে সব পর্যায়ে অটোমেশন বৃদ্ধি এবং সরকারের নীতি সহায়তার বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
মতবিনিময় সভায় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অধিকতর শক্তিশালী করা ও দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন এবং সংস্কারে সহায়তার অনুরোধ জানান।
বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি প্রয়োজন। দেশের পুঁজিবাজার গত ১৫ বছরে ভালো কোম্পানি পায়নি। ভালো কোম্পানিকে বাজারে নিয়ে আসাও চ্যালেঞ্জ। ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তির জন্য বিএসইসি চেষ্টা চালাচ্ছে। পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সুপারিশের আলোকে খুব দ্রুতই পাবলিক ইস্যু রুলস এর সংস্কার করা হবে যা ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি নিশ্চিতে সহায়ক হবে।’ তিনি দেশের অর্থনীতিকে পুঁজিবাজারমুখী করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকুল ইসলাম সভায় বলেন, দেশের পুঁজিবাজারের বড় সমস্যা হলো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কম। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও অংশগ্রহণ বাড়াতে না পারলে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হবে না। একইসঙ্গে দেশের বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন আবশ্যক। বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের পথে অন্যতম অন্তরায় সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদহার।
সভায় পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও রেগুলেটরি কাঠামোকে শক্তিশালী করা, বিএসইসির জনবল বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার উন্নয়ন কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকুল ইসলাম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বীমা ও পুঁজিবাজার অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাঈদ কুতুব এবং পুঁজিবাজার অংশীজন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের শীর্ষ প্রতিনিধিরা।
পুঁজিবাজার অংশীজন হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির (ডিএসই) চেয়ারম্যান মো. মোমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির (সিএসই) চেয়ারম্যান এ কে এম হাবিবুর রহমান, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুল মোতালেব, সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আ স ম খায়রুজ্জামান, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. সাইফুদ্দিন, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব?্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মাজেদা খাতুন, অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি আন্ড মিউচুয়াল ফান্ডসের (এএএমসিএমএফ) সহ-সভাপতি ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী, অ্যাসোসিয়েশন অব ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির (এসিআরএবি) সভাপতি এন কে এ মবিন এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি রূপালী হক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।