নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করা হয়েছে। এ গ্রুপটিতে ১০ সদস্য রয়েছেন। তবে ফোকাস গ্রুপের দুই সদস্য নিয়ে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলায় তা পুনর্গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সম্প্রতি বিএসইসি ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ পুনর্গঠনের বিষয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের নতুন দুই সদস্য হলেনÑঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সহকারী মহাব্যবস্থাপক (লিস্টিং ডিপার্টমেন্ট হেড) রবিউল ইসলাম, এফসিএ এবং ইডিজিই এএমসি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও সিএফএ সোসাইটি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আসিফ খান।
পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের অন্য সদস্যরা হলেনÑপ্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও মো. মনিরুজ্জামান, সিএফএ, মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি আশিকুর রহমান, এ কে খান সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও মনিরুজ্জামান মিয়া, ক্যাল বাংলাদেশের এমডি ও কান্ট্রি হেড অ্যান্ড্রু দেশন পুষ্পরাজাহ, সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) জিএম ও সিটিও (ভারপ্রাপ্ত) ইমাম হোসেন, আহমেদ শেখ রায় অ্যান্ড কোংয়ের পার্টনার শেখ তারেক জহির, আহমেদ হক সিদ্দিকী অ্যান্ড কোংয়ের মো. ওয়াদুদ আহমেদ এবং আইসিএবির সদস্য দীপক কুমার রায়।
পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ক্লিন ইমেজের অধিকারী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ গঠিত হয়েছে। এর আগে গঠিত ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’-এর পরামর্শে এবং তাদের কাজের সহযোগিতায় এই ফোকাস গ্রুপ পুনর্গঠন করেছে বিএসইসি।
এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মানের পুঁজিবাজারের সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স কর্তৃক ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ফোকাস গ্রুপ পুনর্গঠনের বিষয়ে বিএসইসির সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়, পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সুপারিশের ভিত্তিতে শহিদুল ইসলাম, সিএফএ’র স্থলে রবিউল ইসলাম, এফসিএ এবং আলী ইমাম, সিএফএ’র স্থলে আসিফ খান, এফসিএ’কে ফোকাস গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ ছাড়া পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের সদস্যদের সম্মানী হিসেবে সভায় উপস্থিতির ভিত্তিতে প্রত্যেক সদস্যকে সভাপ্রতি আট হাজার টাকা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ বিষয়ে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এর আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ স্বাক্ষরিত আদেশে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়। গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেনÑঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দীন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোংয়ের সিনিয়র পার্টনার এএফএম নেসার উদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তফা আকবর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন প্রমুখ।
ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়, গঠিত টাস্কফোর্সের অধীনে বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক ফোকাস গ্রুপ থাকবে। প্রতিটি ফোকাস গ্রুপ নির্দিষ্ট বিষয়ে কাজ করবে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে টাস্কফোর্সকে সুপারিশ করবে। উল্লেখ্য, কমিশনকে অবহিত করে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ উপযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করবে।
প্রসঙ্গত, বিএসইসি গঠিত পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের ১৭টি কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑপুঁজিবাজারের আকার, তথা জিডিপি ও বাজার মূলধন অনুপাত কম হওয়ার প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করা ও উন্নতির জন্য নীতি প্রণয়নের প্রস্তাব; দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে ব্যাংকঋণের বদলে পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়নে সরকারের নীতি প্রণয়ন ও এ-সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিএসইসির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের সুপারিশ করা; বাজারের সুশাসনের উন্নতির জন্য বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো বিশ্লেষণ করে সমাধানের সুপারিশ প্রণয়ন; বিএসইসির প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সুপারিশ; ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএল, সিসিবিএলের তদারকি কার্যক্রম বিশ্বমানে উন্নীত করাসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিতে সুপারিশ প্রণয়ন; প্রাইভেট প্লেসমেন্ট-সংক্রান্ত সিকিউরিটিজ নীতিমালা যুগোপযোগী করতে সুপারিশ; তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, করপোরেট ঘোষণাসহ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ও বাজারের গভীরতা বৃদ্ধির সুপারিশ প্রণয়ন; বাজার মধ্যস্থতাকারীদের জন্য বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান যুগোপযোগী করতে সুপারিশ করা; বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও আস্থা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান; বাজারে কারসাজি, অনিয়মের বিচার ও জরিমানার সমতা আনতে সুনির্দিষ্ট পেনাল কোড এবং শাস্তির বিধিমালা প্রণয়ন করা; নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের জন্য একটি মানসম্মত পদ্ধতি বা নির্দেশিকা প্রণয়ন; তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানি একীভূত, অধিগ্রহণ সংক্রান্ত হাইকোর্টের অনুমোদনের আগে বিএসইসির অনাপত্তি গ্রহণ-সংক্রান্ত সুপারিশ করা প্রভৃতি।
