ড. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা: ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান (Islam is the complete code of life). সেই হিসেবে মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলি শরিয়াহ্ সম্মতভাবে পরিচালনার জন্য আল কোরআন ও হাদিসে গাইড লাইন রয়েছে। ওই গাইড লাইন অনুযায়ী বর্তমান ডিজিটাল আধুনিক যুগে ব্যাংক, বিমা, শেয়ার মার্কেট ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠন শরিয়াহ্ সম্মতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সময়ের পরিক্রমায় চাহিদার আলোকে শরিয়াহ্ ভিত্তিক গাইডলাইন প্রণীত হচ্ছে। এ গাইডলাইন প্রণয়নে খ্যাতিমান অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার মধ্যে AAOIFI-এর স্ট্যান্ডার্ড আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য। এ প্রবন্ধে শেয়ার মার্কেটে কীভাবে শরিয়াহ্ নীতির আলোকে বিনিয়োগ করা যায়, তা তুলে ধরার চেষ্টা করব, ইনশাল্লাহ। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক তার মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে পারে।
শেয়ার মার্কেট: শেয়ার মার্কেট হলো এমন একটি স্থান যেখানে বিভিন্ন সসীম দায়বদ্ধ কোম্পানি (পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি) যারা স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত হয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে তাদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে। শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ হলো পরোক্ষ বিনিয়ো (Indirect Investment)|
শেয়ার কেনাবেচায় শরিয়াহ পদ্ধতি: বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিন্মোক্ত তিনটি পদ্ধতিতে ইসলামি ব্যাংকগুলো শেয়ার ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারে। ১. মুদারাবা ২. মুশারাকা ৩. মুরাবাহা আন্ডার শিরকাতুল মিলক।
১. মুদারাবা: মুদারাবা নীতিমালার ভিত্তিতে ব্যাংকগুলো গ্রাহককে শেয়ার ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারে। এ পদ্ধতিতে ব্যাংক গ্রাহককে পণ্য বিক্রির পরিবর্তে শেয়ার কেনার জন্য নগদ অর্থ প্রদান করে। চুক্তি মোতাবেক মুনাফা বণ্টিত হয়।
২. মুশারাকা : শেয়ার অর্থ হচ্ছে মুশারাকা, যেটা আরবিতে প্রচুর প্রচলিত আছে। আরবরা এটা করতেন, এখন করেন এবং এটা রাসূল (সা.) এর যুগেও ছিল, পরেও ছিল। মুশারাকা মূলত একটি অংশীদারি ব্যবসা। অংশীদারিত্ব বলতে আরবি ভাষায় ‘শিরক’ ও ‘শিরকাত’ শব্দ দু’টি ব্যবহƒত হয়। আধুনিককালে মুশারাকা বা অংশীদারি ব্যবসা বলতে ‘শিরকাতুল আক্কদ’ বহুল আলোচিত। শিরকাতুল আকদ্ মানে চুক্তির ভিত্তিতে অংশীদারিত্ব, যেখানে চুক্তিই অংশীদারিত্বর ভিত্তি। আরেকটি পদ্ধতি হলো ‘শিরকাতুল ইনান’ যার প্রয়োগ সহজ হওয়ার কারণে ইসলামি ব্যাংকগুলো এ পদ্ধতি অনুশীলন করতে পারে। এখানে প্রাপ্ত বয়স্ক, মূলধন সরবরাহ, ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ এবং মুনাফা বণ্টনের ক্ষেত্রে সম-অংশীদারিত্ব আবশ্যক নয়। তবে লোকসান হলে মূলধন অনুপাতে বহন করতে হয়।
৩. মুরাবাহা আন্ডার শিরকাতুল মিলক: শেয়ার কেনাবেচার ক্ষেত্রে ইসলামি ব্যাংকগুলো ‘মুরাবাহা আন্ডার শিরকাতুল মিল্ক’ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারে। এ পদ্ধতিটি মূলত দুটি বিনিয়োগ পদ্ধতির একটি সমন্বিত রূপ। ১. বাই মুরাবাহা ২. শিরকাতুল মিলক, যার অর্থ এক শরিকের অংশ অপর শরিক কর্তৃক বাকিতে ও লাভে ক্রয়ের অঙ্গীকার করবে। প্রথমে গ্রাহক ও ব্যাংক মিলে কোনো শেয়ার/পণ্য ক্রয় করবে। অতঃপর ব্যাংকের অংশ গ্রাহকের কাছে মুরাবাহার ভিত্তিতে বিক্রি করবে। শেয়ার ব্যবসায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুরাবাহা আন্ডার শিরকাতুল মিলক পদ্ধতিটি অনুশীলন করা যেতে পারে।
শরিয়াহ ইনডেক্স: শরিয়াহ ইনডেক্স হলো তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মাঝে ইসলামি শরিয়াহ অর্থনীতির আলোকে পরিচালিত ব্যবসায়গুলোর দ্বারা প্রভাবিত ইনডেক্স বা সূচক। এমন চারটি বহুল প্রচলিত ইসলামি শেয়ার ইনডেক্স হচ্ছে ডাউজোনস ইসলামিক মানি মার্কেট ওয়ার্ল্ড ইনডেক্স, এসঅ্যান্ডপি শরিয়াহ্ ইনডেক্স, ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস স্টক এক্সচেঞ্জ (এফটিএসই) ইসলামি সূচক এবং মরগান স্ট্যানলি ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক (এমএসসিআই) ইসলামি সূচক। এই চারটি প্রতিষ্ঠান অনুসারে ইসলামি শেয়ার হওয়ার জন্য তিনটি মানদণ্ড পূরণ করতে হয়। (এক) গুণগত মূল্যায়ন: যে কোম্পানি শরিয়াহ্-বহির্ভূত পণ্যদ্রব্য উৎপাদন বা ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত সে প্রতিষ্ঠান ইসলামি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হবে না। (দুই) আর্থিক অনুপাত বিশ্লেষণ: এ ধাপে তিনটি আর্র্থিক অনুপাত বিশ্লেষণ করতে হয়। ক. মোট সুদভিত্তিক ঋণ ও মোট বাজার মূলধন অনুপাত; খ. নগদ এবং স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ ও বাজার মূলধন অনুপাত ও গ. মোট দেনাদার ও বাজার মূলধন অনুপাত। এ তিনটি অনুপাতের প্রত্যেকটি ৩৩ শতাংশের কম হতে হয়। (তিন) শরিয়াহ-বহির্ভূত আয়ের পরিমাণ মোট আয়ের ৫ শতাংশের কম হতে হয়।
শরিয়াহ ইনডেক্সে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো, কোম্পানির নিজস্ব শরিয়াহ বোর্ড থাকা এবং সব কার্যক্রমে শরিয়াহ পরিপালনে সচেষ্ট হওয়া। ডিএসই ও সিএসই প্রত্যেকটির আলাদা শরিয়াহ ইনডেক্স আছে। তবে প্রত্যেকটির পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ডিএসই এর শরিয়াহ ইনডেক্স ডিজাইন করেছে এসঅ্যান্ডপি, ডাও জোনস আর সিএসই’র শরিয়াহ ইনডেক্স ডিজাইন করেছেন TASIS। দুটির শরিয়াহ গাইডলাইনে অনেক পার্থক্য রয়েছে। TASIS Shariah Index-50-৫০ বলছে মাত্র ১০ শতাংশ ফিক্সড অ্যাসেট থাকলে ইহবে। অপরদিকে S&P বলছে, তরল অ্যাসেট ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত থাকতে পারে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ অধিভুক্ত শরিয়াহ ইনডেক্স প্রবর্তিত নিরীক্ষণ পদ্ধতি
ঢাকা স্টক একচেঞ্জের শরিয়াহ ইনডেক্সে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো, কোম্পানির নিজস্ব শরিয়াহ বোর্ড থাকা এবং প্রতিষ্ঠানের সব কার্যক্রম শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত হওয়া। S&P শরিয়াহ ইনডেক্স বাংলাদেশের আগে বিশ্বের অনেক দেশের এক্সচেঞ্জেই চালু হয়েছে। এ ইনডেক্স করার ক্ষেত্রে সাধারণত AAOIFI–র শরিয়াহ স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করা হয়।
ক. খাতভিত্তিক নিরীক্ষণ: শেয়ার বাজারে নিবন্ধিত কোম্পানির মূল ব্যবসায়িক কার্যক্রম শরিয়াহ নীতিমালার আলোকে পরিচালিত হচ্ছে কি না, তা যাচাই বাছাই করাকে ‘সেক্টরভিক্তিক নিরীক্ষণ’ বলে। সাধারণত যেসব তৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ার অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে তা হচ্ছে:
ক. টোব্যাকো এবং টোব্যাকো সংশ্লিষ্ট পণ্য দ্রব্য; খ. অ্যালকোহল তথা নেশাজাতীয় পণ্য উৎপাদন এবং বিক্রয়; গ. জুয়া, ক্যাসিনো কার্যক্রম; ঘ. সুদভিত্তিক ব্যাংক ও বিমা; ঙ. আবাসিক হোটেল; চ. ক্লাব, মিউজিক, টিভি চ্যানেল বা মিডিয়া, ছ. পরনোগ্রাফি বাণিজ্য; জ. শূকরের মাংস কিংবা শূকর সংশ্লিষ্ট পণ্যের লেনদেন; ঝ. হারাম বিনোদন কার্যক্রম; ঞ. অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয়, এবং ত. অন্যান্য অবৈধ তৎপরতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
খ. আর্থিক বিবরণীভিত্তিক নিরীক্ষণ: ১৯৯৩ সালে ওআইসি’র ইসলামিক ফিক্হ একাডেমি’র সিদ্ধান্ত ছিল, যেসব কোম্পানির সুদী লেনদেনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তাদের শেয়ারÑএ বিনিয়োগ করা সম্পূর্ণভাবে হারাম। অবশ্য পরে সার্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে বিভিন্ন পার্সেন্টেজ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা শেয়ার বিনিয়োগে শরয়ী বৈধতা নিরীক্ষণের বেঞ্চমার্ক (ইবহপযসধৎশ) তথা মাপকাঠি হিসেবে সুপরিচিত। তবে এসব পার্সেন্টেজ নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে, যা মূলত বেঞ্চমার্ক হিসেবে পরিচিত, কুরআন সুন্নাহ্্ও কোনো টেক্সট নয়; সার্বিক কল্যাণ (মাস্লাহাহ) বাস্তবায়নই প্রধান দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
যাদের মূল ব্যবসা হালাল, তবে সুদী ব্যাংকের ঋণ আছে, বা সুদী ব্যাংকে ডিপোজিট আছে, বা শরিয়াহ-বর্হিভূত সম্পদে মিশ্রণ আছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় নিরীক্ষণ করতে হবে তা AAOIFI– এর Shari©ah Standard No. ২১ এ বর্ণিত হয়েছে; যা নি¤েœ ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হলো:
৩/৪/২ এ বলা হয়েছে যে, স্বল্প মেয়াদি বা দীর্ঘ মেয়াদি যাবতীয় সুদযুক্ত ঋণের পরিমাণ কোম্পানির সব শেয়ারের সর্বমোট বাজার দরের ৩০ শতাংশ থেকে কম হতে হবে। জেনেশুনে সুদের ওপর ঋণ গ্রহণ করা হারাম, তা যে পরিমাণ হোক না কেন।
৩/৪/৩-এ বলা হয়েছে যে, সুদযুক্ত আমানত গ্রহণের পরিমাণ কোম্পানির মোট ইকুইটির বাজার মূল্যের ৩০ শতাংশ থেকে কম হতে হবে। তবে এ কথা মনে রাখতে হবে যে, সুদের ভিত্তিতে আমানত গ্রহণ করা হারাম, তা যে পরিমাণই হোক না কেন।
৩/৪/৪ এ বলা হয়েছে যে, শরিয়াহ-বর্হিভূত উৎস হতে আয়ের পরিমাণ কোম্পানির মোট আয়ের ৫ শতাংশের বেশি নয়।
ওই শরিয়াহ স্ট্যান্ডার্ডে যেসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো সেকেন্ডারি মার্কেটে ক্রয়-বিক্রয় করার জন্য ৩০ শতাংশ বা এর বেশি ফিক্সড অ্যাসেট, প্রোডাক্ট ও সার্ভিস থাকতে হবে। ৩০ শতাংশের কম থাকলে এগুলো ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সমমূল্যের বিনিময়ে লেনদেন করা অপরিহার্য হবে। অর্থাৎ ১০ টাকা ফেইস ভ্যালুর শেয়ার দশ টাকাতেই কিনতে হবে। কম বা বেশি হলে সুদ হবে। অ্যাওফির স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে হারাম সম্পদ মিশ্রিত হালাল ব্যবসার কোম্পানির শেয়ারের ক্ষেত্রে প্রতি ফাইন্যান্সিয়াল পিরিয়ডের পর শেয়ার পিউরিফিকেশন করতে হবে। অর্থাৎ কোম্পানির যত পার্সেন্ট সুদী ঋণ, বিনিয়োগ আর হারাম সম্পদ থাকবে, শেয়ারের বাজার মূল্যের তত পার্সেন্ট সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দিতে হবে। এসঅ্যান্ডপির ইনডেক্সে সাধারণ ডিভিডেন্ড পিউরিফিকেশন রেশিও (DP Ratio) থাকে। যা হিসাব করার উপায় হলো: মোট শরিয়াহ বর্হিভূত আয়/মোট আয়। DP Ratio যদি ০.১ হয়, তাহলে ডিভিডেন্ডের ১০ শতাংশ সদকা করে দিতে হবে। শরিয়াহ ইনডেক্সের জন্য ঝ্চ সাধারণত মাসে দুইবার শরিয়াহ রিভিউ করে থাকে। ওই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ক্রয়ের সময় সুদী ঋণের আশ্রয় নেয়া যাবে না। মালিকানা ছাড়া বিক্রয় করা যাবে না এবং ভবিষ্যতে বিক্রয়ের চুক্তি করা যাবে না। শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের সময় শরিয়াহর যাবতীয় মূলনীতি পরিপালন করতে হবে। প্রকৃত মালিকানা ও অধিগ্রহণ রেজিস্ট্রেশন করার পরই কেবল বিক্রয় করা যাবে। অনুরূপভাবে কোনো অগ্রাধিকার শেয়ার ক্রয় করা যাবে না। কোনো কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে সুদযুক্ত ঋণ, সুদয্ক্তু সিকিউরিটিজ, উশুলযোগ্য সম্পদ (৩০-৩৩ শতাংশ) ইত্যাদির ক্ষেত্রে এক তৃতীয়াংশ (Receivables) ছাড় দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ অধিভুক্ত শরিয়াহ ইনডেক্স প্রবর্তিত নিরীক্ষণ পদ্ধতি
চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জের তত্ত্বাবধানে চিটাগং শরিয়াহ ইনডেক্স এরও নিজস্ব শেয়ারের বৈধতা নিরীক্ষণ পদ্ধতি রয়েছে। শেয়ারের বৈধতা নিরীক্ষণের ক্ষেত্রে চিটাগং শরিয়াহ ইনডেক্স প্রবর্তিত নীতিমালা হচ্ছে।
ক. কোম্পানির মূল ব্যবসা হালাল হতে হবে। সুতরাং অবৈধ ব্যবসা যেমন সুদযুক্ত আর্থিক লেনদেন, টোব্যাকো, অ্যালকোহল, শূকর, খারাপ বিনোদন, বিস্ফোরক উৎপাদন প্রভৃতি ব্যবসার সঙ্গে যেসব কোম্পানির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তাদের শেয়ার শরিয়াহ বৈধতা নিরীক্ষণের অনুপযুক্ত বিবেচিত হবে; খ. ঋণের পরিমাণ মোট সম্পদের তুলনায় ২৫ শতাংশ থেকে কম হতে হবে; গ. শরিয়াহ-বর্হিভূত আয়ের পরিমাণ মোট আয়ের তুলনায় ৩ শতাংশ থেকে কম হতে হবে; ঘ. মোট সম্পদের অনুপাতে নগদ টাকার এবং উশুলযোগ্য সম্পদের (Receivables) পরিমাণ ৯০ শতাংশ থেকে কম হতে হবে।
উপসংহার: শরিয়াহ ভিত্তিক শেয়ারবাজার গড়ে তুলতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে শেয়ার বাজারে শরিয়াহভিত্তিক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে আইন প্রণয়ন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)’। ‘সিকিউরিটিজ মার্কেট শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল বিধিমালা-২০২২’ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। যার সদস্য সংখ্যা ৯ জন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী সব ধরনের শরিয়াহ সম্মত সিকিউরিটিজের কার্যক্রম শরিয়াহ কাউন্সিলের অধীনে পরিচালিত হবে। ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে একটি কেন্দ্রীয় শরিয়াহ বোর্ড থাকা অপরিহার্য। মালয়েশিয়া, পাকিস্থানসহ বেশ কয়েকটি দেশে কেন্দ্রীয় শরিয়াহ বোর্ড রয়েছে। আমাদের দেশে যে সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ড আছে তা বেসরকারি পর্যায়ে হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখতে পারছে না। শেয়ার মার্কেটে শরিয়াহ সম্মত বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইসলামি ব্যাংকিং আইন প্রয়োজন। দেশের অর্থনীতিতে ইসলামি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবদান প্রায় ৩০ শতাংশ, ফলে দেশি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শরিয়াহভিত্তিক শেয়ার মার্কেট গড়ে তোলা সময়ের দাবি।
তথ্যসূত্র:
১. মো. সোলায়মান ইসলাম নিলয়, ‘ইসলামি ব্যাংকিং আমাদের দেশের অর্থনীতিতে এক অপার সম্ভাবনা’ Bdnews24.com,VPublished : 19 Feb 2012
২. ড. মো. হাবিবুর রহমান, ‘শেয়ার-এর শরয়ী বৈধতা নিরীক্ষণ পদ্ধতি: আন্তর্জাতিক অনুশীলন’ ইসলামি আইন ও বিচার, Vol.-14, Issue:54 April-June, 2018
৩. মাওলানা মিরাজ রহমান, ইসলাম.প্রিয়.কম, ২১ জানুয়ারি ২০১৪
৪. ড. মোহাম্মদ ফফিউল্লাহ, ‘ইসলামি শেয়ারের বিবেচ্য মানদণ্ড’ ব্যাংকিং নিউজ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১।
কর্মকর্তা
শরিয়াহ্ সেক্রেটারিয়েট
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
drmdgulammustafa@gmail.com