পুঁজিবাজারে কারসাজির জন্য বুথফেরত জরিপে কারচুপি

শেয়ার বিজ ডেস্ক; ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে শেষ দফা ভোটের পর প্রায় সব বুথফেরত জরিপে দাবি করা হয়, এবারও ভূমিধস জয় পাবে বিজেপি। এমনকি কিছু জরিপে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের আসনসংখ্যা ৪০০ ছাড়াবে বলে দাবি করা হয়। কিন্তু গত ৪ জুন প্রকৃত ফল ঘোষণার পর দেখা যায়, বুথফেরত জরিপের সঙ্গে এর বিশাল ফারাক রয়েছে। রেকর্ড গড়ার পরিবর্তে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতেই ব্যর্থ হয় নরেন্দ্র মোদির দল। একই দিনই ধস নামে ভারতের পুঁজিবাজারে। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন বিনিয়োগকারীরা।

এমন পরিস্থিতিতে দেশটির পুঁজিবাজারে কারচুপি করার লক্ষ্যেই লোকসভা নির্বাচনের বুথফেরত জরিপ বদলে দেয়া হয়েছিল কি না, তা নিয়ে এক বিশ্লেষণ করেছে দেশটির গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস। এমনকি বুথফেরত জরিপ নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা সাকেত গোখলে।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়ার (এসইবিআই) কাছে পাঠানো এক চিঠিতে গোখলে লিখেছেন, বুথফেরত জরিপের ফল প্রকাশের পর বাজার ঊর্ধ্বমুখী হলে গত ৩ জুন ব্যাপক মুনাফা করেন বিনিয়োগকারীরা। বাজারের সূচক আবারও ৭৬ হাজারের ঘরে উঠে যায়। নিফটিও নজির গড়ে ২৩ হাজারের ঘরে উঠে যায়; উত্থান হয় ৭৩৩ পয়েন্ট। গত তিন বছরের মধ্যে এই দুই সূচকের সবচেয়ে বেশি উত্থান হয়েছিল সোমবার। শেয়ারের দাম বাড়ে ১৪ লাখ কোটি রুপি।

কিন্তু ৪ জুন ৩১ লাখ কোটি রুপির বেশি (৩১ ট্রিলিয়ন) ক্ষতির সম্মুখীন হন তারা। এদিন, ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টায় নিফটি সূচকের পতন হয় ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এই সূচকটি নেমে আসে ২২ হাজার ৫৫৭ পয়েন্টে। এসঅ্যান্ডপি বিএসই সূচকের পতন হয়েছে তিন শতাংশ। সকাল সাড়ে ৯টায় এই সূচকটি নেমে দাঁড়ায় ৭৪ হাজার ১০৭ পয়েন্টে। ট্রেডিং শুরু হওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের দাম কমেছে প্রায় ২০ লাখ কোটি রুপি। এরপর বেলা ১১টা ১০ মিনিটে নিফটির পতন হয় ৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। মঙ্গলবার সকালে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বাজারগত মূলধনের পরিমাণ আট কোটি ৭৮ লাখ রুপি হ্রাস পেয়ে হয় ৪১৭ দশমিক ১৪ লাখ কোটি রুপি।

ভারতের বাজারবিশেষজ্ঞ কমল পারেখ দাবি করেন, এমন উত্থানের ফলে আরও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে পুঁজিবাজার। সমীক্ষার ফলের সঙ্গে বাস্তব গণনা না মিললে বাজারের পতন হবে।

তৃণমূল নেতার মতে, বুথফেরত জরিপগুলোয় কারচুপি অথবা ইচ্ছা করে ফলাফল বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ’র পক্ষে দেখানো হয়েছিল কি না, যার কারণে ৩ জুন পুঁজিবাজার অভূতপূর্ব উত্থানের দিকে পরিচালিত হয়েছিল, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার স্বার্থে তা নির্ণয় করা গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, স্পষ্টতই পুঁজিবাজারে উত্থানের জন্য বুথফেরত জরিপগুলোয় কারসাজি করা হয়েছিল। পুঁজিবাজার বিপর্যস্ত হওয়ার পর লাখ লাখ বিনিয়োগকারী অর্থ হারান। অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়ার মতো জরিপকারীরা ইচ্ছা করে বিজেপির পক্ষে ফল দেখিয়েছিল কি না, তা নির্ধারণের জন্য তদন্ত হওয়া উচিত। এটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিজেপিও অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়ার ক্লায়েন্ট ছিল।

গত ১ জুন শেষ দফার নির্বাচনের পর প্রায় সব সংস্থার বুথফেরত জরিপে দাবি করা হয়েছিল, বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৩৫০টির বেশি আসনে জিতবে। এই পূর্বাভাসের পরে গত ৩ জুন ভারতের দুই প্রধান পুঁজিবাজার সূচক সেনসেক্স এবং নিফটি তিন শতাংশের বেশি লাভ দেখে। কিন্তু ৪ জুন ভোটগণনার পর ফল ঘোষণা করলে দেখা যায়, বিজেপি ২৪০ এবং এনডিএ জোট ২৯৩ আসনে জিতেছে, যা বুথফেরত জরিপগুলোর তুলনায় অনেক কম। ওইদিনই ভারতের পুঁজিবাজারে ছয় শতাংশ পর্যন্ত ধস নামে। যদিও এর পর থেকে বাজার আবার ঘুরে দাঁড়ানোর পথে রয়েছে। বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও জোট শরিকদের সহায়তায় আবার ক্ষমতায় আসছেন নরেন্দ্র মোদিই।