Print Date & Time : 8 July 2025 Tuesday 12:32 am

পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে পাঁচ নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : লুটপাটের মাধ্যমে পুঁজিবাজারকে বেসামাল করে দেয়ার পেছনে গত কয়েক দশক ধরে যারা জড়িত, তাদের বিচার না হলে মানুষের আস্থা ফিরবে না বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘পুঁজিবাজারকে যে অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা অকল্পনীয়। এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হবে।’

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গতকাল রোববার পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব কথা বলেছেন। এ সময় পুঁজিবাজারের উন্নয়নে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তার নির্দেশনা পাঁচটি হলো-সরকারের মালিকানাধীন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর শেয়ার কমিয়ে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, দেশীয় বড় বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে প্রণোদনাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া, স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি রোধে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় তিন মাসের মধ্যে পুঁজিবাজার সংস্কার, পুঁজিবাজারে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বড় ঋণপ্রবণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংকঋণ-নির্ভরতা কমিয়ে পুঁজিবাজার থেকে বন্ড এবং ইক্যুইটির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহে উৎসাহিত করা। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পুঁজিবাজারে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে, যাতে এটি লুটেরাদের আড্ডাখানা না হয়ে মানুষের আস্থার জায়গা হয়ে ওঠে।’

বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএসইসির চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ পুরো মিটিংয়ে ব্রিফিং করেন মার্কেটের কী অবস্থা। গত ৯ মাসে কী ধরনের রিফর্ম করা হয়েছে। কোথায় কোথায় এখনও রিফর্ম চলমান-সেগুলো নিয়ে তিনি বিস্তারিত একটা ধারণা দেন। তার আলোকে খুবই প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে। আলোচনার প্রেক্ষিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

প্রধান উপদেষ্টার পাঁচটি প্রধান নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশে ইউনিলিভারসহ যেসব বিদেশি কোম্পানিতে সরকারের অংশীদারত্ব আছে, তাদের দ্রুত পুঁজিবাজার আইপিওতে আনা। দেশে অনেক প্রাইভেট কোম্পানি আছে যাদের টার্নওভার বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ এখন আর ২০-৩০ বছর আগের বাংলাদেশ নেই। অনেক বড় বড় কোম্পানি হয়েছে বাংলাদেশে। তাদের স্টক মার্কেটে আনার জন্য বলা হয়েছে। সেটার জন্য কী ধরনের প্রণোদনা দরকার, সেটা রাশেদ মাকসুদকে বলেছেন। যেমন সিটি, মেঘনা আরও অনেক কোম্পানি আছে, তাদের কীভাবে আনা যায়।’

শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘স্টক মার্কেটে ভেস্টেড ইন্টারেস্টেড লোক অনেক। অনেক ধরনের ভেস্টেড ইন্টারেস্টেড আছে। ফলে দেখা যায় আমরা রিফর্ম নিলেও, অনেক সময় রিফর্মগুলো ঠিকমতো কাজ করতে চায় না বা এরা রিফর্মগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়। এ জন্য স্টক মার্কেটে ডিপ রিফর্ম যাতে ক্যারি আউট করা যায়, এমন ব্যক্তি যাদের এখানে ইন্টারেস্ট নেই, এমন একটি রিফর্মের কথা প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন।’

প্রেস সচিব বলেন, ‘স্টক মার্কেট রেগুলেটর বা এই সমস্ত যেসব এজেন্সি বা অফিস আছে এখানে অনেক ধরনের দুর্নীতির কথা শোনা যায়। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন- যাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ আছে খুব দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। যাতে পুরো স্টক মার্কেটে এক ধরনের বার্তা পৌঁছায় কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা হবে না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যেসব বড় বড় কোম্পানি আছে তারা ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেয়। অনেক সময় সিন্ডিকেট ঋণ দেয়, অনেকগুলো ব্যাংক থেকে এক হাজার দুই হাজার কোটি টাকা ঋণ নেন বড় ফান্ড সেটাপের জন্য। এটার জন্য বলা হয়েছে-এই ঋণটা কীভাবে নিরুৎসাহিত করে, কীভাবে তারা বন্ড ইস্যু করে বা স্টক মার্কেটের মাধ্যমে তাদের ফান্ড সংগ্রহ করতে পারেন-০সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া।’

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমি আবারও বলব খুবই প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা পুরোটা শুনেছেন, শোনার পর তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা আশা করছি খুব দ্রুতই স্টক মার্কেটে ক্লিয়ার ও মিনিংফুল রিফর্ম দেখতে পারব।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব বলেন, ‘এটা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অফিসিয়াল মিটিং। আপনারা দেখবেন আমাদের কাজগুলো হলে যারা যারা স্টেকহোল্ডার সবাই বেনিফিটেড হবেন। সবাই একটা ভাইব্রেন্ট স্টক মার্কেট দেখতে পারবেন।’

প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) আনিসুজ্জামান চৌধুরী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ উপস্থিত ছিলেন।