Print Date & Time : 29 August 2025 Friday 1:16 am

পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতন, বিএসইসি চেয়ারম্যানের অপসারণ চেয়ে বিক্ষোভ

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল বুধবার চলতি সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে সিংহভাগ কোম্পানি শেয়ারদর কমেছে। ডিএসইতে সূচকের মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে। একইসঙ্গে আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কমেছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। অন্যদিকে দেশের অপর পুঁজিবাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) একই চিত্র দেখা গেছে। এই দরপতনের কারণে আবারও ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের। এর জের ধরে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি তুলছেন বিনিয়োগকারীরা।

তথ্যমতে, গতকাল ডিএসই ও সিএসইতে আগের কার্যদিবসের চেয়ে টাকার পরিমাণে লেনদেন কিছুটা কমেছে। দিনশেষে উভয় পুঁজিবাজারে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম কমেছে। যে কারণে দরপতনের ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি পুঁজিবাজার।

ডিএসই ও সিএসই সূত্রে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে গতকাল দিনশেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৪ দশমিক ৯ পয়েন্ট কমেছে। সর্বশেষ এ সূচক পাঁচ হাজার ২২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। একইভাবে ডিএসই শরিয়াহ সূচক শূন্য ৬৩ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১২১ পয়েন্টে নেমেছে। আর মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির জন্য নির্ধারিত ডিএস৩০ সূচক ৭ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৮৬৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ডিএসইর তিন সূচকের পতন দৃশ্যমান ছিল।

গতকাল ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ১১৯টি কোম্পানির। এ বিপরীতে দর হারিয়েছে ২১৪টি কোম্পানি। দিনের লেনদেন শেষেও ৬২টির কোম্পানি-মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের দর অপরিবর্তিত ছিল। এ দিন ডিএসইতে মোট ৩০০ কোটি ছয় লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩৪০ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। এক দিনের ব্যবধানে ডিএসইর লেনদেন টাকার অঙ্কে প্রায় ৪০ কোটি টাকা কমেছে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ৩৩ দশমিক ১২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৫৫০ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৪ দশমিক শূন্য দুই পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ১১ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ৩ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট কমে ৯১১ পয়েন্টে ও সিএসই৩০ সূচক ৪৩ দশমিক দুই পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ৭৪৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সিএসইতে মোট ২০৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৭২টি কোম্পানির, কমেছে ১১৩টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২২টির। আর সিএসইতে চার কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৬ কোটি ৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের কারণে পুঁজি হারিয়ে ব্যাপক ক্ষতিতে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ বাড়ছে। গতকাল দুপুরে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে অপসারণ দাবিতে রাজধানীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে বিনিয়োগকারীদের অন্যতম সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশন। মানববন্ধন থেকে পুঁজিবাজারে চলমান আস্থার সংকটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দুই সংস্থার প্রধানকে দায়ী করা হয়।

রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভকালে বিনিয়োগকারীরা বলেন, তাদের এখন মূল দাবিই বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ। তারা পদত্যাগ করলেই পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে। তাদের প্রতি আস্থার সংকটের কারণেই এত দিনেও বাজার ঘুরে দাঁড়ায়নি।

তাদের দাবি, বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে মাশরুর রিয়াজকে দায়িত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তাকে নিয়ে সামান্য বিতর্ক উঠতেই তিনি বিএসইসিতে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেননি। অথচ এখন সবাই বিএসইসি চেয়ারম্যানের বিপক্ষে, সবাই তার পদত্যাগ চায়। বাজারে গতি না ফেরায় এখন তার অপসারণের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশে ব্যাপক সংস্কারের কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। যার জের ধরে দেশের ব্যাংক খাতসহ কয়েকটি খাতে উন্নতি দৃশ্যমান। কিন্তু এখনও পুঁজিবাজারে সংস্কারের কোনো প্রভাব নেই। তাই আস্থার সংকট কাটেনি। যোগ্য-অযোগ্য সেটা মুখ্য নয়, এখন আস্থা ফেরানোর বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের কাছে মুখ্য। বিনিয়োগকারীদের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিকÑ উনি দায়িত্ব থেকে সরে গেল কিংবা সরানো হলে সেই বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের কাছে স্পষ্ট হবে।