Print Date & Time : 27 July 2025 Sunday 7:55 pm

পুঁজিবাজারে বজায় থাকুক ইতিবাচক ধারা

ঈদের আগে যেদিন পুঁজিবাজারের শেষ কর্মদিবস ছিল, সেদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক ওলেনদেন উভয়েরই বৃদ্ধি লক্ষ করেছি আমরা। ওইদিন বাজার শুরুই হয়েছিল ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দিয়ে। শেষ পর্যন্ত পূর্ববর্তী দিনের চেয়ে প্রায় আট কোটি টাকা বেশি লেনদেন হয় ওই সময়; এক দিনের ব্যবধানে সূচকও বাড়ে ৩৯ পয়েন্টের মতো। এখন ঈদের পর বাজারের কর্মব্যস্ততার শুরুতেও ডিএসই সূচকে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে এবং সার্বিকভাবে প্রবণতাটিকে ইতিবাচক বলেই ধরে নিতে হয়। খেয়াল করার বিষয়, ঈদের আগে ও পরে ডিএসই সূচক আর লেনদেন বাড়লেও তাতে কোনো অস্বাভাবিকতা ছিল না। বরং কারও কারও মতে, ঈদের সময় সামগ্রিক অর্থনীতিতে যে চাঙাভাব বিরাজ করে; তারই প্রতিফলন দেখা গেছে ওই সময়কার পুঁজিবাজারে। সবাই চাইবেন, বাজারের এ ভাবটি বহাল থাকবে আগামী দিনগুলোতেও।
এক্ষেত্রে আরও কয়েকটি পর্যবেক্ষণ অবশ্য নীতিনির্ধারকদের আমলে নেওয়া দরকার। স্বল্পোন্নত দেশের সীমানা থেকে এরই মধ্যে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। কেউ কেউ একে পরিসংখ্যানের মারপ্যাঁচ বলে অভিহিত করতে চাইলেও সাম্প্র্রতিককালে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের ধারাকে অগ্রাহ্য করা কঠিন। উন্নততর অর্থনীতির একটি বৈশিষ্ট্য হলো, সেটি যত অগ্রসর হয়, ততই তার পুঁজিবাজার গোটা অর্থনীতির সঙ্গে অধিকতর হারে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। আর এর আলোকে সম্প্রতি ডিএসই যে প্রবণতা দেখাল, তার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটো দিকই রয়েছে। ইতিবাচক দিক হলো, এর অর্থ অন্তর্নিহিত প্রভাবকের কারণেও এখন ক্রমে শক্তিশালী হবে পুঁজিবাজার। আর দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, স্থানীয় অর্থনীতির ভিত্তিগুলোর নড়বড়ে অবস্থার প্রলম্বিত প্রভাব পড়বে পুঁজিবাজারেই। পাঠকরা লক্ষ করে থাকবেন, বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের ব্যাংক খাতের দুরবস্থা নিয়ে শঙ্কা জানিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। মৌখিকভাবে স্বীকার না করলেও নীতিনির্ধারকরা যে ইস্যুটি নিয়ে চিন্তিত, তা বোঝা যায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব দেখে। তবে দুঃখজনক হলো, হালহকিকত নিয়ে আলোচনাকালে রিয়েল ইকোনমিতে ব্যাংক খাতের অংশীদারিত্ব নিয়ে যত কথা হয়, শেয়ারবাজারে তার প্রভাব নিয়ে ততটা আলোচনা হয় না বললেই চলে। আবার যতটুকু আলোচনা হয়, সেটিও সীমাবদ্ধ থাকে এ ধরনের উক্তির মধ্যে যে, আমাদের পুঁজিবাজারের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হচ্ছে এই ব্যাংক খাত এবং সেহেতু খাতটি দুর্বল হলে পুঁজিবাজারে তার প্রভাব অবধারিত। এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নির্ণয়ের দুঃসাহস কেউ দেখিয়েছে বলে অবশ্য জানা যায় না। তা সত্ত্বেও কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। রিয়েল ইকোনমিতে ব্যাংক খাতের দুর্বলতার প্রভাব কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি দেখে, গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকগুলো একের পর এক সংকটে জড়িয়ে পড়ছে; কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণেও সেগুলোকে আর্থিক সহায়তা জোগাতে হবে কিংবা জুগিয়ে যাবেন তারা। ফলে রিয়েল ইকোনমিতে ব্যাংক খাতের দুর্বলতার পরিণাম দূর করা সম্ভব অনেকাংশে। এক্ষেত্রে পুঁজিবাজারের জটিলতা হলো, এটি এমনিতেই স্পর্শকাতর। ফলে রিয়েল ইকোনমিতে ব্যাংক খাতের দুরবস্থা যতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে, তার কয়েকগুণ বেশি প্রভাব পড়বে শেয়ারবাজারে। উপরন্তু যেহেতু এর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই, তাই কুপ্রভাবগুলো বিবর্ধিত হতে বাধ্য। এ অবস্থায় আমরা আশা করব, প্রকৃত পরিস্থিতি যেন কখনোই ওইদিকে না গড়ায়; তার প্রতি লক্ষ রাখবে কর্তৃপক্ষ। তাদের বরং ফোকাস থাকা উচিত, ঈদের আগের ও পরের ইতিবাচক প্রবণতাটি যেন অব্যাহত থাকে।