দেশের পুঁজিবাজারের পথচলা শুরু ১৯৫৪ সালে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৬৫ বছরেও অপরাপর দেশ কিংবা আমাদের অর্থনীতির অগ্রগতির সঙ্গেও তাল মিলিয়ে দেশের পুঁজিবাজার এগোতে পারেনি।
ইতোমধ্যে দুই দফায় শেয়ার বাজারে বড় ধসে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকে তো বাজার ছেড়েই চলে গেছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের স্বার্থের সুরক্ষা দিতে পারেনি। ফলে পুঁজিবাজার ঘিরে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ছিল অনেক কম। অবশ্য ধীরে ধীরে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বাজারে পণ্যবৈচিত্র্যের বেশ ঘাটতিও রয়েছে। মিউচুয়াল ফান্ড বাজারে এলেও ডেরিভেটিভসহ অন্য নতুন কোনো পণ্য নেই। এ ছাড়া অটোমেশন ও আধুনিকায়নে ঘাটতি আছে স্টক এক্সচেঞ্জ দুটির।
বিশ্বের সব দেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। চাইলেই রাতারাতি অর্জন সম্ভব নয়। এর জন্য কিছু প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারের কাঠামোগত সংস্কার করা হয়েছে। অন্যায্য কারসাজি রোধে কঠোর আইন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সার্বক্ষণিক নজরদারি নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু সেভাবে সফলতা আসেনি। সব দেশে শিল্প মূলধনের বড় অংশের জোগান শেয়ারবাজার থেকে এলেও বাংলাদেশে এর উল্টো চিত্র দেখা যায়।
পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা আনতে নিরীক্ষকদের কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বাজার সংস্কারের পথে কোনো দুষ্ট, অনভিজ্ঞ অথচ আপাত শক্তিশালী পক্ষ কিংবা খেলোয়াড়রা যাতে প্রভাব বিস্তার না করতে পারে, সেটাও নিশ্চিত করলেই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেয়া হবে; তারা ভরসা পাবেন।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনেকে সত্য ও গুজবের পার্থক্য যাচাইয়ে গলদঘর্ম হন। পরিসংখ্যান হেরফেরে তারা প্রভাবিত হন এবং প্রতারিত হন। এমন প্রবণতা রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেই এগিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ দক্ষতা বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিএসইসি প্রায়ই একটা কথা বলে। বিনিয়োগকারী তো প্রসপেক্টাসের বিবরণ পড়েই আইপিও কেনে। তাই ক্ষতির দায় বিনিয়োগকারীর নিজেরই। কথা সম্পূর্ণ সত্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো, নিয়ন্ত্রক সংস্থা কি যথানিয়মে যাচাই-বাছাই করে বাজারে ছাড়ার অনুমতি দেয়। এখানে বিএসইসির দায় নেই! আমরা মনে করি, বিএসইসির ‘যোগ্য’ ব্যক্তিরাই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছেন। তাই বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দায় তাদের ওপরও পড়ে। তারা কি কখনও জবাবদিহির আওতায় এসেছেন?
এটি সবাই জানে যে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকির কথা মাথায় রেখেই বিনিয়োগকারীরা এখানে কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করেন। কিন্তু তাদের অর্থ ম্যানিপুলেশন করে লুটেরা গোষ্ঠী লোপাট করবে আর সরকার তথা বিএসইসির কর্তারা তার কোনো দায় বহন করবে না, এটি ন্যায্যতার কথা হলো না। শুদ্ধাচার চর্চা যেন কেবলই কাগজে কলমের বিষয়। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন পুঁজিবাজারে অরাজকতা থাকবেই। বাজারের দায়িত্ববান ব্যক্তির জন্য পুরস্কার এবং দায়িত্বহীন অসৎ শাস্তির নিশ্চয়তা বিধানের সংস্কৃতি চালু করা গেলেই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নৈতিক ও বৈধ স্বার্থ রক্ষা সম্ভব।