মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ছে। গত দুই মাসের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে এসেছেন প্রায় ২১ হাজার নতুন নারী বিনিয়োগকারী। দুই মাস আগে তাদের বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ছিল ছয় লাখ ৯৪ হাজার ৬০৮টি। বর্তমানে যার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ১৫ হাজার ২৭৫। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী কোম্পানি সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে নারী বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি আগ্রহী হওয়ার কারণ হিসেবে আইপিও অফারের কথা বলছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, অধিকাংশ নারীই সেকেন্ডারি মার্কেটের চেয়ে প্রাইমারি মার্কেটের প্রতি আগ্রহ বেশি দেখাচ্ছেন। কারণ এখানে কোনো ঝুঁকি নেই। সে জন্য তারা প্রাইমারি মার্কেটে বিনিয়োগ করতে চান। ফলে আইপিওর অফার থাকলে তাদের বাজারের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। তবে বর্তমানে সেকেন্ডারি মার্কেটেও তাদের উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে।
আগে পুঁজিবাজারে কালেভদ্রে নারী বিনিয়োগকারীদের দেখা মিলত। কিন্তু এখন প্রতিদিনই ব্রোকারেজ হাউজগুলোয় নারী বিনিয়োগকারীদের আনাগোনা লক্ষ করা যায়। একটা সময় নারীদের অ্যাকাউন্ট পুরুষ দ্বারা পরিচালিত হলেও এখন বেশিরভাগ নারী নিজের অ্যাকাউন্ট নিজেই পরিচালনা করছেন। অন্যদিকে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেনের সুবিধা থাকায়ও পুঁজিবাজারের সঙ্গে জড়িত হচ্ছেন অনেক নারী।
এ বিষয়ে কথা হলে জাহানারা জামান ডলি নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ২০১০ সালের আগে পুঁজিবাজারে নারী বিনিয়োগকারীর উপস্থিতি তেমন একটা দেখা যেত না। ধসের আগে তাদের উপস্থিতি থাকলেও ধসের পর আবারও প্রায় নারীশূন্য হয়ে পড়ে বাজার। তবে পুঁজিবাজার বিনিয়োগের অনুকূলে থাকায় এখন আবার অনেকেই এ বাজারের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে মডার্ন সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীন বলেন, বাজারে আইপিওর অফার থাকলে অনেকে এ শেয়ারের জন্য আবেদন করেন। যে কারণে বিও অ্যাকাউন্টও বাড়ে। পাশাপাশি সেকেন্ডারি মার্কেট ভালো থাকলেও বিনিয়োগকারীরা বাজারে ফিরে আসেন। তখন এ ধরনের অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে নারী বিনিয়োগকারী আগের তুলনায় বাড়লেও এটা যথেষ্ট নয়। আমার জানামতে এখনও অনেক নারীর বিও পুরুষ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। তাই এগুলোকে নারীদের বিও বলা চলে না। এ বাজারের উন্নয়নে নারীদের আরও বেশি অংশগ্রহণ জরুরি।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে অধিকাংশ নারীই প্রাইমারি মার্কেটে বিনিয়োগ করতে ভালোবাসেন। সে কারণে আইপিও থাকলে তাদের অ্যাকাউন্ট সংখ্যা বাড়ে। তবে সেকেন্ডারি মার্কেটেও এখন তাদের বিনিয়োগ বাড়ছে। ভবিষ্যতে তাদের বিনিয়োগ আরও বাড়বে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১৪ প্রতিষ্ঠানের আইপিও অনুমোদন পেয়েছে। পাইপলাইনে রয়েছে আরও প্রায় দুই ডজন কোম্পানি। পর্যায়ক্রমে এসব কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন মিললে নারীদের বিও সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানিয়েছে, খুব শিগগির আরও ছয়টি প্রতিষ্ঠানের আইপিওর অনুমোদন মিলবে।
এদিকে গত দুই মাসে বাজারে মোট বিও বেড়েছে ৭৪ হাজার। এর মধ্যে গত মাসে ওপেন হয় ৩৫ হাজার নতুন বিও অ্যাকাউন্ট। এতে সেপ্টেম্বর শেষে মোট বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৯৪ হাজার ৭৫৪টি। আর বর্তমানে সচল বিও অ্যাকাউন্টের মধ্যে দেশীয় বিনিয়োগকারীর বিও রয়েছে ২৫ লাখ ২৬ হাজার ৩৬৪টি। এর আগে সময়মতো বিও ফি পরিশোধ না করায় বাতিল হয়ে গেছে প্রায় আড়াই লাখ অ্যাকাউন্ট।
বর্তমানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক লাখ ৫৬ হাজার ২৮৪টি এবং বিভিন্ন কোম্পানি ১২ হাজার ১০৬টি। এদিকে সচল বিওর মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৩টি।
নিয়মানুযায়ী, জুন মাসে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে সেসব হিসাব বন্ধ হয় না। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এ ফি জমা নেওয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুন মাসে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময়ে বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।