নুরুন্নাহার চৌধুরী কলি : দেশের পুঁজিবাজারে আবারও সূচকের পতন হয়েছে। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে গতকাল রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। গতকাল দেশের দুই পুঁজিবাজারেই আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। তবে ডিএসই ও সিএসইতে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর কমেছে।
ডিএসইর সূত্রে জানা গেছে, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ২৯ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৭৯১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬ দশমিক ৬২ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৪৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৮ দশমিক ০১ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৭৮০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। তবে লেনদেনে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ডিএসইতে গতকাল লেনদেন আগের কার্যদিবসের তুলনায় বেড়েছে। সেইসঙ্গে সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে।
ডিএসইর তথ্যমতে, গতকাল লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের দর কমেছে। ডিএসইতে গতকাল মোট ৪০৩টি কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১০২টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ২৪১টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে ৫৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল।
এদিকে বিভিন্ন ক্যাটেগরির মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরির ২২১টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৫৫ কোম্পানি ও ফান্ডের দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ১৪২টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ২৪ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর।
একইভাবে ‘বি’ ক্যাটেগরির ৮২টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর দাম বেড়েছে। এর বিপরীতে ৫৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ৮টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
জেড ক্যাটেগরির ৯৭টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৪২টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ২৫টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
একসঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড খাতেও বেশিরভাগ ফান্ডের ইউনিটের দর কমেছে। লেনদেন হওয়া ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে মাত্র একটি ফান্ডের ইউনিট দর বেড়েছে, বিপরীতে ২৯টি ফান্ডের ইউনিট দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ছয়টি ফান্ডের ইউনিট দর।
ডিএসইতে গতকাল মোট ১৬ কোটি ৭১ লাখ ৮৫ হাজার ৬৫১টি শেয়ার ও ইউনিট এক লাখ ১০ হাজার ৯৮২ বার হাতবদল হয়েছে। এর জের ধরে দিনশেষে ডিএসইতে মোট লেনদেন দাঁড়িয়েছে ২৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ২৬২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল মোট ২৩৬টি কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৮৮টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ারদর বেড়েছে। এর বিপরীতে ১১৮টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ারদর কমেছে। দিনশেষে ৩০টি কোম্পানি ও ফান্ডের দর অপরিবর্তিত ছিল। সিএসইতে গতকাল মোট ১০ কোটি ১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগের কার্যদিবসে ছিল ৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে যে পতন দেখা গেছে, তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। তবে বাজারের এই গতি-প্রকৃতির পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে এবং বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ডিএসইতে সূচকের পতনের ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ দেখা গেছে। তবে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেদিকেই এখন সবার নজর থাকবে। বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, অব্যাহত এই দরপতনের ফলে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তারা বিনিয়োগকারীদের আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।
অন্যদিকে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতনের প্রতিবাদে গতকাল লেনদেন শেষে কিছুসংখ্যক বিনিয়োগকারী রাজধানীর মতিঝিলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পুরোনো ভবনের সামনে কফিন মিছিলও করেছেন তারা।
এ সময় ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবি করেন। একইসঙ্গে তারা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদের অপসারণেরও দাবি জানান। বিক্ষোভে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য বিএসইসি ও আইসিবি’র দুর্বল তদারকি এবং ব্যর্থতাকে দায়ী করেন। তারা অবিলম্বে বাজার স্থিতিশীল করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।