বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগের নতুন সিদ্ধান্ত

পুঁজিবাজার পুনরুদ্ধারের আশায় বিনিয়োগকারী

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজারে টানা তৃতীয় সপ্তাহ ধরে সূচক ও লেনদেনের পতন হয়েছে। তবে গত সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবসে পতন হলেও শেষের দিনগুলোয় ছিল সূচক ও লেনদেনে উত্থান। এতে শেষ কার্যদিবসে লেনদেন ছাড়িয়েছে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার বেশি। এর কারণ হিসেবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সপ্তাহে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন এবং বন্ডকে বিনিয়োগের বাইরে রাখায় পুঁজিবাজার পুনরুদ্ধারের আশ্বাস পাওয়া গেছে। ফলে এখন থেকে সেকেন্ডারি মার্কেটে বন্ডের বিনিয়োগ বাড়বে, যা বাজারকে আগের ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে কাজ করবে। একই সঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ যে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সেটাও বাজারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বলে মনে করছেন তারা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৬৩৯ কোটি ১৭ লাখ টাকার। তার আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৭৬১ কোটি তিন লাখ টাকার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ১২২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বা ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গত সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ৯১টির, দর কমেছে ৪০টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩৭টি কোম্পানির। লেনদেন হয়নি ৩৩টি কোম্পানির।

গত সপ্তাহে ডিএসইর সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮ দশমিক ৫১ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ছয় হাজার ২০৬ দশমিক ৮০ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ৮ দশমিক ৫১ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ্ সূচক ডিএসইএস ৩ দশমিক ৯২ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ হাজার ২০৯ দশমিক ৪৪ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৩৩ পয়েন্টে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তৃতীয় প্রান্তিক শেষে বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপে পুঁজিবাজার নেতিবাচক অবস্থানের মাধ্যমে সপ্তাহ শেষ করেছে। ডিএসইর প্রধান সূচক গত সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবসে নি¤œমুখী ছিল। তবে পরবর্তী কার্যদিবসে বাজারে পুনরুদ্ধার অবস্থা লক্ষ করা গেছে।

এদিকে গত সপ্তাহে ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়া বিল মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের খবরের ভিত্তিতে সপ্তাহের শেষ দিন ছিল ভালো অবস্থানে। যেখানে বলা হয়েছে, সব করপোরেট বন্ড এবং ডিবেঞ্চার ব্যাংকের বিনিয়োগ পোর্টফোলিওর বাইরে থাকবে, যা বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেই সঙ্গে পুঁজিবাজারের সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকের আরও সুযোগ তৈরি করবে। ফলে পুঁজিবাজার পুনরুদ্ধারের আশ্বাস বিনিয়োগকারীদের মাঝে বিনিয়োগের আস্থা বৃদ্ধি করবে বলে জানান তারা।

তারা আরও বলেন, গত সপ্তাহে মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ সীমা ২০ শতাংশ বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ফলে এখন থেকে ফান্ডগুলো সেকেন্ডারি মার্কেটে ৬০ শতাংশের পরিবর্তে ৮০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারবে। সেক্ষেত্রে মিউচুয়াল ফান্ড থেকে বাজারের গতিশীলতা ধরে রাখতে একটি ভালো ভূমিকা হিসেবে দেখা যাবে, যা বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা বৃদ্ধিতে কাজ করবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

অপরদিকে চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ১১২ কোটি ৬৬ লাখ টাকার। তার আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৬৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৫০ কোটি ৫২ লাখ টাকার বা ৭৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। তালিকাভুক্ত ১৮৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ৪৬টির, দর কমেছে ৪৩টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮৭টি কোম্পানির।

এক সপ্তাহে ব্যবধানে প্রধান সূচক সিএএসপিআই শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ২৮৮ দশমিক ৩৪ পয়েন্টে। সিএসই৫০ সূচক দশমিক ৭৫ শতাংশ, সিএসই৩০ সূচক দশমিক ১৬ শতাংশ, সিএসইসিএক্স সূচক দশমিক ৪৭ শতাংশ ও সিএসআই সূচক দশমিক ৮৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১ হাজার ৩১৩ দশমিক ৩৮ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩৪১ দশমিক ৮১ পয়েন্টে, ১০ হাজার ৯৬২ দশমিক ৬০ পয়েন্টে ও ১ হাজার ১৪৮ দশমিক ৭৬ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসইএসএমইএক্স সূচক দশমিক ৭৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৫৯৮ দশমিক ৪৬ পয়েন্টে।