পুরোদমে ক্লাসে ফিরতে মার্চ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ: শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড-১৯-এর নতুন ধরন ওমিক্রন দ্রুত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ায় সতর্ক থাকার কথা তুলে ধরে নতুন শিক্ষাবর্ষে পুরোদমে ক্লাস শুরু করতে আগামী মার্চ পর্যন্ত ‘পর্যবেক্ষণ’ করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

তিনি বলেন, ‘ওমিক্রন নিয়ে শেষ কথা বলার সময় আসেনি। আমেরিকা ও ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ছে ব্যাপকভাবে। আমাদের আরও দেখার দরকার। কাজেই মার্চ না আসা পর্যন্ত বলতে পারব না যে আমরা নিরাপদ অবস্থানে আছি।’

গতকাল রাজধানীর মাতুয়াইলের মৌসুমি প্রেসে নতুন বছরের পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর অগ্রগতি দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

কভিডের সংক্রমণ কমে আসায় গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধাপে ধাপে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। তবে ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ায় বিশ্বজুড়ে বিধিনিষেধ কঠোর হচ্ছে।

বিদ্যুৎগতিতে ছড়াতে থাকা ওমিক্রন এরই মধ্যে একশ’রও বেশি দেশে পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশেও স্বাস্থ্যবিধি মানার শিথিল মনোভাব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে জনসমাগম এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

এমন পরিস্থিতিতে এবার বই উৎসব হবে কি না জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেয়া না হলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থীরা বই পেয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ‘এই বছরেও বই উৎসব করার মতো অবস্থা নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। কাজেই সব স্কুলে ক্লাস ধরে ধরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই বিতরণ করা হবে। সেই বিতরণের নিয়মে কোনো সমস্যা হবে না। শিক্ষার্থীরা সবাই হাতে বই পেয়ে যাবে।’

২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন উৎসব করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা খরচে পাঠ্যপুস্তক তুলে দিচ্ছে সরকার। ১১ বছর পর মহামারির কারণে গতবছর পাঠ্যপুস্তক বিতরণের উৎসব করা যায়নি।

দীপু মনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধির কারণে ১ তারিখে সবাইকে বই দিতে পারব না। কিন্তু ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৯৫ শতাংশ বই স্কুলে স্কুলে পৌঁছে যাবে। বাকি পাঁচ শতাংশ বই ৭ জানুয়ারির মধ্যে পৌঁছে যাবে।’

ছাপাখানার কাজের অগ্রগতি কতটা সে বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী জানান, ‘বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২১ কোটি বই বাঁধাই হয়েছে, সরবরাহ হয়েছে ১৭ কোটির বেশি। আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে সবই প্রায় হয়ে যাবে। তারপরেও হয়তো খুব স্বল্পসংখ্যক বাদ থাকতে পারে। সেটাও আশা করছি অবশ্যই জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে আমরা দিয়ে দিতে পারব।’

দীপু মনি বলেন, ‘আমি এখানে দেখলাম কাজ পুরোদমে চলছে। তাদের যতটুকু কাজ পুরোটাই হয়ে গেছে। এখন কিছু বাঁধাইয়ের কাজ চলছে। তারা দুই দিনের মধ্যে এগুলো সব সরবরাহ করে দেবে।’

তিনি জানান, ‘১৫৮টি প্রেসে মাধ্যমিকের ও ৪২টিতে প্রাথমিকের কাজ চলছে। তদারকির জন্য একটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এনসিটিবির পক্ষ থেকে সপ্তাহে দুই-তিন দিন প্রেস পরিদর্শন করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ের টেন্ডারে একটি সমস্যা হয়েছিল, সেটা আবার করা হয়েছে। সেটাও আশা করছি ২৫ জানুয়ারির মধ্যে হয়ে যাবে।’

নতুন বইয়ে ভুল থাকলে তা ঠিক করা হবে বলে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি ভুল যেন না হয়, আর নিম্নমানের কাগজ দেয়া হলে সেসব প্রেসকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। যদি মান নিয়ে কেউ দুর্নীতি করে, খারাপ মানের বই দেয়, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

সরকার ২০২৫ সাল থেকে সম্পূর্ণ নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর পরিকল্পনা দিয়েছে। তার আগে নতুন শিক্ষাবর্ষে ১০০টি প্রাথমিক ও ১০০টি মাধ্যমিক স্কুলে এ পাঠ্যক্রমের পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার কথা ছিল।

তবে নতুন পরিকল্পনায় এ সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে বলে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আগে আমরা ভেবেছিলাম ১০০টি স্কুল নেব। এখন আমরা ৬০টি স্কুলে নিয়ে এসেছি। তারপরও এ সংখ্যাটা ঠিক আছে, গবেষণার ভিত্তিতে যতটুকু দরকার।’

পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে এ কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তার কারণ হচ্ছে আমাদের শিক্ষার্থী ভর্তি হতে জানুয়ারি শেষ হয়ে যাবে। কাজেই সব শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা ট্রাই আউট শুরু করতে পারব না। স্কুল বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সারাদেশের ভৌগোলিক বৈচিত্র্য দেখা হয়েছে। শিক্ষার্থীর ধরন, সামাজিক প্রেক্ষাপট সবই চিন্তা করে করা হয়েছে।’