পুরোনো টাকা চেনে না মেট্রোরেলের ভেন্ডিং মেশিন!

নিজস্ব প্রতিবেদক: উদ্বোধনের তৃতীয় দিনেও মেট্রোরেলের ভেন্ডিং মেশিনে (ডিজিটাল টিকিট বিক্রির বুথ) ত্রুটি দেখা গেছে। গতকাল সকালে আগারগাঁও ও উত্তরা উত্তর স্টেশনের অন্তত চারটি মেশিনে এ ত্রুটি দেখা যায়। সকাল ৮টায় উত্তরা উত্তর ও আগারগাঁও স্টেশনে তিনটি করে মোট ছয়টি ভেন্ডিং মেশিন চালু করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর থেকেই ভেন্ডিং মেশিনে সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। প্রথমে চারটি মেশিন বিকল হলেও কিছুক্ষণ পর সব কটি বুথের সার্ভারেই ত্রুটি দেখা দেয়। একপর্যায়ে সব কটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে হাতে অর্থাৎ ম্যানুয়ালি টিকিট বিতরণ শুরু হয়।

মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে আসা অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, নির্ধারিত গন্তব্যের টিকিট হাতে পেলেও তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা কাটা হয়নি। আগারগাঁও স্টেশনে দেখা যায়, এক যাত্রী উত্তরার দিয়াবাড়ী স্টেশনের টিকিট কাটতে ভেন্ডিং মেশিনে ১০০ টাকার একটি নোট দেন। এরপর আরও ২০ টাকা দেন তিনি। এতে দুটি টিকিটসহ ৬০ টাকা ফেরত পান ওই যাত্রী। এরপরই মেশিনটি বিকল হয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে মেট্রোরেল লাইন-৬-এর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (মেকানিকাল) আবদুল মতিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা টিকিট বিক্রয় মেশিনের ত্রুটি চিহ্নিত করতে পেরেছি। এগুলো সারিয়ে তুলতে কাজ চলছে। এ ছাড়া যাত্রীসাধারণ এবং আমাদের সেবাদানকারীদের এ পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগছে।’

এদিকে প্রথম দিনের মতো গতকাল দ্বিতীয় দিনও মেট্রোরেলের দুই স্টেশনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। মেট্রোরেলে চড়তে আগারগাঁও ও উত্তরা উত্তর স্টেশনে গতকাল সকাল থেকেই যাত্রীরা জড়ো হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীসংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

এর আগে সাধারণ যাত্রীদের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়ার প্রথম দিন বৃহস্পতিবারও ভেন্ডিং মেশিনের সার্ভারে ত্রুটি দেখা দেয়। এতে যাত্রীদের টিকিট কাটতে বেশ বিড়ম্বনা পোহাতে হয়।

ওইদিন মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ভেন্ডিং মেশিনে খুচরা টাকা না থাকায় যাত্রীরা ৫০০ বা হাজার টাকার নোট দিয়ে টিকিট কাটতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন।

পরিবার নিয়ে মেট্রোতে চড়তে আগারগাঁও স্টেশনে আসা আরিফুল ইসলাম জানালেন, সকাল ৮টার কিছু পরে তিনি লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। ৯টার দিকেই টিকিট কাউন্টারের কাছে চলে এসেছেন।

স্টেশনের শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত রোভার স্কাউট সদস্য শুভ চন্দ্র দাস জানান, ভেন্ডিং মেশিনগুলো এখন আগের চেয়ে ভালো কাজ করছে। নরম হয়ে যাওয়া টাকা কিংবা অন্য কোনো কারিগরি কারণে মেশিন থেমে গেলে টেকনিশিয়ানরা কিছুক্ষণের মধ্যে তা আবার ঠিক করে দিচ্ছেন।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক বলেন, ‘প্রথম দিনের তুলনায় গতকাল পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়েছে। যাত্রীদের সহজে ভ্রমণের সুবিধার্থে আমরা এমআরটি পাস সংগ্রহের পরামর্শ দিচ্ছি। ৫০০ টাকা দামের একটি এমআরটি পাসে ৩০০ টাকা রিচার্জ করা থাকবে। এই পাস থাকলে কাউকে কোনো লাইনে দাঁড়াতে হবে না। একসঙ্গে অনেক মানুষ টিকিট কিনতে গিয়ে যে ভোগান্তিতে পড়ছেন, তারা এমআরটি পাস কিনে নিলে আর কোনো সমস্যার মুখোমুখি হবেন না। আমাদের কাউন্টারগুলোতেও চাপ কমবে।’

প্রসঙ্গত, গত বুধবার বেলা ১১টায় ফলক উম্মোচনের মধ্য দিয়ে মেট্রোরেলের দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে মেট্রোরেল বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করে।