তদন্ত চলাকালে মামলার অগ্রগতি এবং গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের সম্পর্কে সাংবাদিকদের সামনে পুলিশের বিশেষ কিছু মন্তব্য ওই মামলার তদন্ত ও বিচারকাজে প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু পুলিশ সদস্যের অতি উৎসাহ থেকে কখনও কখনও গণমাধ্যমের কাছে তদন্ত চলাকালীন অভিযুক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মন্তব্য করার বিষয়ে নীতিমালা চেয়েছেন হাইকোর্ট। অভিযোগ যতক্ষণ পর্যন্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণিত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আসামি বা অপরাধী বলা যাবে না। তবে জন-উদ্বেগ প্রশমিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে একটি নির্দিষ্ট সীমা বজায় রেখে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলাতে কোনো দোষ দেখা যায় না। কিন্তু মন্তব্য বা তথ্য প্রকাশের এই সীমাটা ঠিক কতটুকু, তা নির্ধারণ করার দায়িত্ব থাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ বিভাগের।
সম্প্রতি বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলা একটি অলোচিত ঘটনা। তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন শুনানিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ম্যাজিস্ট্রেটের লিপিবদ্ধের আগেই আসামির দোষ স্বীকার সম্পর্কে পুলিশ সুপার যে সংবাদ সম্মেলন করেন সে বিষয়ে বিচারপতি একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। কার্যত, যে কোনো মামলার তদন্ত চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এমন আচরণ অযাচিত ও অনাকাক্সিক্ষত। উপরন্তু তা যে কোনো মামলার তদন্তকাজকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতার প্রশ্নে প্রশ্নবিদ্ধ এবং তদন্তের গতি-প্রকৃতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পারে। এমনকি জনমনে বিচার বিভাগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্বশীলতা, পেশাদারিত্ব ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাছাড়া ইদানীং গ্রেফতারকৃত সন্দেহভাজন বা অভিযুক্তদের গণমাধ্যমের সামনে এনে হাজির করা হয়; এক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয় না বলেও গতকালের রায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ নির্দেশনা ওই একই আদালত থেকে এর আগেও একবার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে বিষয়ে এখনও কোনো পদক্ষেপ কিংবা সংশোধন চোখে পড়েনি। বস্তুত মামলার তদন্তের স্বার্থে পুলিশ প্রয়োজনে যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারে: এটাকে নাগরিকের স্বাধীনতা খর্বে পুলিশের ন্যায়সঙ্গত কর্মকৌশল বলা হয়। তারপর অভিযুক্ত ব্যক্তির অপরাধী প্রমাণিত হওয়ার আগ অবধি মানসিক ও শারীরিক সুরক্ষা এবং সামাজিক মর্যাদা অক্ষুণœ রাখার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবশ্য সচেতন হওয়া উচিত। কিন্তু নাগরিকের স্বাধীনতা খর্বে পুলিশের ন্যায়সঙ্গত উপায় যদি কোনো নীতিমালা দ্বারা পরিচালিত না হয়, তবে তা যে কোনো ভুলে নাগরিক অধিকার বিনষ্ট করবে।
কাজেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শক এ বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নে হাইকোর্টের নির্দেশনা আমলে নেওয়ার উদ্যোগ নেবে বলে আশা রাখি।
