প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়িতে লেবু মিয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তবে স্বজনদের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে।
লেবু মিয়া বাঁশতৈল গ্রামের বাহার উদ্দিনের ছেলে। এর আগে সোমবার দুপুরে এক নারীকে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তাকেসহ দুজনকে পুলিশ আটক করে। পরে ফাঁড়িতেই লেবু মিয়ার মৃত্যু হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় মানুষ জানান, প্রায় আট বছর আগে সখিনা বেগম (৪৩) নামে এক নারীর সঙ্গে বাঁশতৈল গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মফিজুর রহমানের (৪৭) বিয়েবিচ্ছেদ হয়। এর পর থেকে একই গ্রামে আলাদা বাড়ি করে দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন সখিনা। মেয়েদের বিয়ে হওয়ায় প্রবাসী ছেলের স্ত্রীকে নিয়ে তিনি ওই বড়িতে থাকতেন। গত রোববার রাতে সখিনা বাড়িতে একা ছিলেন। এরপর সোমবার সকালে ঘুম থেকে না ওঠায় পাশের বাড়ির লোকজন খোঁজ করতে গিয়ে তার লাশ দেখতে পান। পরে খবর পেয়ে মির্জাপুরের বাঁশতৈল ফাঁড়ির পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। স্বজনদের দাবি, সখিনাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সখিনার সাবেক স্বামী মফিজুর এবং একই গ্রামের বাসিন্দা লেবু মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকের পর ফাঁড়িতে রাখা হয়। সেখানে লেবু মিয়ার মৃত্যু হয়। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ এনে দুপুরে গোড়াই-সখীপুর সড়কের বাঁশতৈল বাজারে এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করে রাখেন।
লেবু মিয়ার স্ত্রী আলিয়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীকে বিনা অপরাধে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। রাতে তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী বলেন, ‘বাঁশতৈল ফাঁড়ির এসআই সেলিম তাকে আটক করে নিয়ে যান। পরে তাকে বেদম মারধর করা হয়। একপর্যায়ে লেবু মারা গেছেন। পুলিশ এখন আত্মহত্যার নাটক সাজাচ্ছে। আমরা এসআই সেলিমের বিচার দাবি করছি।’
বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ফাঁড়িতে কোনো ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। এসআই সেলিমসহ দুজনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা।’
মির্জাপুর থানার ওসি শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, ‘ওই ব্যক্তি ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।’