Print Date & Time : 11 September 2025 Thursday 1:16 am

পূবালী ব্যাংকের গলার কাঁটা কেয়া গ্রুপ

নাজমুল ইসলাম ফারুক: ২১টি করপোরেট গ্রুপের কাছে পূবালী ব্যাংক ঋণ দিয়েছে আট হাজার কোটি টাকার বেশি। এসব কোম্পানির মধ্যে প্রায় সবাই নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করলেও পারছে না কেয়া গ্রুপ। পূবালীর এককালের ভালো কাস্টমার কেয়া গ্রুপকে ঋণ আদায়ে খুব বেশি চাপ দিতে পারছে না। আবার চাপ না দেওয়ার কারণে ঋণ আদায়ও হচ্ছে না। সব মিলিয়ে কেয়া গ্রুপকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে পূবালী ব্যাংক।

তথ্য মতে, গত ডিসেম্বরের হিসাব অনুযায়ী কেয়া গ্রুপের কাছে পূবালী ব্যাংকের পাওনা ৫৬৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০১৫ সালে কেয়া গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান কেয়া কসমেটিকস এবং কেয়া ইয়ার্নের নামে নেওয়া ৪৭৯ কোটি টাকার ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদে ঋণ পুনর্গঠন করা হয়। তবুও ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয় কেয়া গ্রুপ। এ নিয়ে গ্রুপের সঙ্গে অনেক আলোচনা হলেও টাকা আদায় হচ্ছে না।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) এমএ হালিম চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, কেয়া গ্রুপের ঋণের বিপরীতে শেয়ার লিয়েন করা আছে। তাছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ সম্পদও জামানত হিসেবে রাখা আছে। কেয়া গ্রুপ যেন ব্যাংকটির পাওনা পরিশোধ করে দেয় এটাই চায় পূবালী ব্যাংক। তাছাড়া ঋণ আদায়ের জন্য বিকল্প প্রক্রিয়ার কথাও ভাবছে পর্ষদ। পূবালী ব্যাংক যথাযথ আইন অনুযায়ী ঋণ আদায়ের চেষ্টা করবে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, কেয়া গ্রুপের কারণে বড় ধরনের খেলাপি ঋণের ঘানি টানতে হচ্ছে পূবালী ব্যাংককে। শত চেষ্টা করেও খেলাপির পরিমাণ কমাতে পারছে না ব্যাংকটি। বরং দিন দিন বাড়ছে। ২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণ ছিল এক হাজার ৯২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার আটশ ৩২ কোটি টাকা। ছয় মাসে খেলাপির পরিমাণ বাড়ে ৭৪০ কোটি টাকা। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে ব্যাংকের শীর্ষ ব্যবস্থাপনাকে।

কেয়া গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, কেয়া গ্রুপ ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে পূবালী ব্যাংক ছাড়াও অন্যান্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু ঠিকঠাকমতো না হওয়ায় লোকসানে পড়ে গ্রুপটি। কেয়া ইয়ার্নের উৎপাদিত সুতাতেও বড় ধরনের লোকসানে পড়ে। ফলে নগদ অর্থের সংকটে পড়ে গ্রুপটি। তাই সময়মতো ঋণের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় কেয়া গ্রুপ। তবে  কেয়ার কর্ণধার আবদুল খালেক পাঠান ধীরে ধীরে সবকিছু গুছিয়ে আনছিলেন। ব্যবসা উন্নতির পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের একটি পরিকল্পনাও ছিল কেয়া গ্রুপের। এর মধ্যে দুদকের মামলায় অনেক পরিকল্পনাই উল্টাপাল্টা হয়ে গেল বলে জানান তারা।

এদিকে পূবালী ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে,  দেশের ২১টি বড় প্রতিষ্ঠান পূবালী ব্যাংকের কাছ থেকে আট হাজার কোটি টাকার বেশিও ঋণ নিয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আছেÑহা-মীম গ্রুপ, আবুল খায়ের, কেয়া, সিটি, মেঘনা, প্রাণ, এনভয়, জিপিএইচ গ্রুপ। তাদের দু-একটি ছাড়া বাকি গ্রুপগুলো ঋণের টাকা নিয়মিত পরিশোধ করছে। তবে কেয়া গ্রুপও একটি নিয়মিত গ্রাহক ছিল। হঠাৎ তাদের ঋণ পরিশোধে সমস্যা সৃষ্টি হয়। তবে পূবালী ব্যাংক যে পরিমাণ ঋণ দিয়েছে, তার বিপরীতে মজবুত জামানতও রয়েছে। ঋণের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাতে ব্যাংকের কোনো সমস্যা হবে না। তবে একজন গ্রাহককে ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি চিন্তা করে ব্যবস্থা নেবে পর্ষদ। নিয়মিত গ্রাহক হিসেবে তার বিরুদ্ধে সহজেই কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত এ মুহূর্তে নিতে চাচ্ছে না ব্যাংকটি।