Print Date & Time : 14 August 2025 Thursday 12:30 pm

পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কঠোর হোন

‘দর বেঁধে আর অভিযানেও কমেনি দাম, পেঁয়াজের সেঞ্চুরি’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা নিশ্চয়ই আশাব্যঞ্জক নয়। ভোক্তাদের দুর্ভোগ কমাতে ও বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার পেঁয়াজসহ কয়েকটি ভোগ্য দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা কার্যকর না হওয়ায় আকস্মিক অভিযানও পরিচালনা করেছে; এসবেও কাজ হয়নি। বাজার নিয়ন্ত্রণে গত ১৪ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ, আলু ও ফার্মের ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ১১ টাকা ৫১ পয়সা ধরে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে বাজারে পাইকারিতে ২৭ টাকা এবং খুচরায় ৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর ৩৩ থেকে ৪১ টাকা পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ বিবেচনায় পাইকারিতে ৫৩ টাকা এবং খুচরায় ৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এরপর ঘোষণা বাস্তবায়নে সারাদেশের গুদাম ও মোকামে অভিযান চালিয়ে লাখ লাখ টাকা জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেই অভিযান অব্যাহত থাকলেও দামে লাগাম টানা যায়নি।

পাইকারি বাজারে দামের পার্থক্য সম্পর্কে এক বিক্রেতা বলেন, ‘দাম বেড়ে যাওয়ায় ভালো-খারাপ সব মানের আলুই বস্তায় দিয়ে দেয়া হচ্ছে। খুলে বিক্রি করতে গেলে অনেক নষ্ট আলু পাওয়া যায়। সে কারণে দামের এমন পার্থক্য।’

এর আগেও ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ নিয়ে নানা কারসাজি করেছেন এবং তাতে ভোক্তাদের দুর্ভোগের সীমা ছিল না। কেনা দাম যত পড়ে তার চেয়ে অনেক বেশি দামে তারা পেঁয়াজ বিক্রি করেন, এমনকি নিজেরা মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেন। দেখা গেছে, একসময় মজুত করা পেঁয়াজ বিক্রি করতে না পেরে পচে যাওয়ায় তা সড়কের পাশে ফেলে গেছেন।

এটি দুঃখজনক। তাছাড়া রপ্তানিকারক দেশগুলো যে হারে দাম বাড়ায় আমাদের আমদানিকারকরা বাড়ান কয়েকগুণ বেশি। ফলে বাজারে তারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। আমদানির পাশাপাশি বাজারে নজরদারি বাড়াতে হবে। আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে আড়তে সরবরাহ না করে মজুত করে রাখার অভিযোগ রয়েছে। পণ্যের দাম বাড়ানোর কারসাজি বন্ধে সরকার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালায়। তা সত্ত্বেও নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না ব্যবসায়ীদের। মজুতদারি ঠেকাতে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। মানুষের দুর্দশাকে পুঁজি করে যারা ফাউ কামিয়ে নেয়ার ফন্দি করছে, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কাজ হলো, নির্দিষ্ট নিত্যপণ্যের আপৎকালীন মজুত গড়ে তুলে প্রয়োজনীয় সময়ে ভোক্তাসাধারণের কাছে সরবরাহ করার মাধ্যমে বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখা। রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি এ দায়িত্ব কতটা পালন করছে, সেটিও বিবেচনায় নেয়া জরুরি। কম দূরত্ব ও সহজলভ্যতার কারণে পেঁয়াজ আমদানির বেশিরভাগটা ভারত থেকে হয়, এটি স্বাভাবিক ও যৌক্তিক। কিন্তু কোনো একক দেশের ওপর নির্ভর করা ঠিক নয়। পেঁয়াজ রপ্তানিকারক অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। তবে সর্বাগ্রে প্রয়োজন যাদের কারণে বাজার অস্থিতিশীল হচ্ছে জনস্বার্থে তাদের বিরদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া।