Print Date & Time : 20 July 2025 Sunday 7:24 pm

পেঁয়াজ রসুন আদা চালের দাম কমছে

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: করোনাভাইরাসের জন্য সৃষ্ট পরিস্থিতিতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়িয়েছিল পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম। কিন্তু প্রশাসনের বাজার মনিটরিংয়ের কারণে পাইকারি বাজারে এসব পণ্যের কমেছে।

একই সঙ্গে বোরো ধান ঘরে ওঠার জেরে কমতে শুরু করেছে চালের দামও। সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তায় চালের দাম কমেছে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এর আগে দেশে লকডাউনের শুরুতে হঠাৎ করেই এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রামের চালের আড়ত চাক্তাইয়ের চালপট্টি ও পাহাড়তলীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে নাজিরশাইল, জিরাশাইল (সিদ্ধ), মিনিকেট (সিদ্ধ), বাসমতি (সিদ্ধ), স্বর্ণা (সিদ্ধ), বেতি, পাইজাম (আতপ), মিনিকেট (আতপ) ও কাটারিভোগ (আতপ ও মোটা সিদ্ধ) বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জিরাশাইল (সিদ্ধ) বস্তায় ২৫০ টাকা কমে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৪০০ টাকা, মিনিকেট (সিদ্ধ) ৩০০ টাকা কমে গিয়ে দুই হাজার ১০০ টাকা এবং পাইজাম (সিদ্ধ) বস্তায় ২০০ টাকা কমে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ২৫০ টাকায়। এছাড়া স্বর্ণা (সিদ্ধ) ২০০ টাকা কমে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ২০০ টাকায়।

অপরদিকে মিনিকেট (আতপ) ১০০ টাকা কমে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৩০০ টাকা, মোটা সিদ্ধ ১৫০ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৯৫০ টাকায়। এছাড়া চিনিগুঁড়া চাল বিক্রি হচ্ছে চার হাজার থেকে চার হাজার ৬০০ টাকা, নাজিরশাইল (সিদ্ধ) দুই হাজার ৭০০ টাকা এবং কাটারিভোগ (আতপ) দুই হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই তিন ক্যাটেগরির চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নতুন ধান ওঠায় মোকামগুলোতে ধান-চালের সরবরাহ বেড়েছে। ফলে বাজার কমতির দিকে রয়েছে। সামনে আরও কমতে পারে। তবে সরকার ধান কেনার মিল কোটা রাখায় দাম বৃদ্ধির আশঙ্কাও রয়েছে, কারণ এতে মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ নেন। সরকার যদি সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনে তবে কৃষক উপকৃত হবে।’

দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান ও আমদানি সরবরাহ বৃদ্ধির ফলে ভোগ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকা কেজি দরে। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। যদিও এক সপ্তাহ আগে ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। আর রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা কেজিতে, যা এক সপ্তাহ আছে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

অপরদিকে অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ভোগ্যপণ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ দাম বাড়িয়েছিল আদার, যা পাইকারি পর্যায়ে ২৮০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৩৩০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। তবে বর্তমানে খাতুনগঞ্জ বাজারে ৮০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আদা। এর মধ্যে চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায় আর মিয়ানমার থেকে আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।

এছাড়া আদা, রসুন ও পেঁয়াজের পাশাপাশি ডাল, তেল ও চিনির দামও কমেছে। বর্তমানে মোটা মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭৪ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১২৫ টাকা, মুগ ডাল ১২০ টাকা ও ছোলা ৪৩ টাকায়। একই সঙ্গে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম কমেছে। বর্তমানে পাম তেল প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ২০০ টাকা, সয়াবিন তিন হাজার ২০০ টাকা এবং চিনির মণ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ১০০ টাকায়।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে এক হাজার ৩৬০ টন আদা, রসুন ও পেঁয়াজ খালাসের অপেক্ষায় আছে। ৬৮টি কনটেইনারে এসব পণ্য রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ কনটেইনার পেঁয়াজ, ২৮ কনটেইনার রসুন ও ১০ কনটেইনার আদা রয়েছে।

এ বিষয়ে খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে আড়তদার উত্তম কুমার শাহ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বর্তমানে মিয়ানমার থেকে পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরেও খালাসের অপেক্ষায় আছে প্রচুর পরিমাণে ভোগ্যপণ্য। এসব পণ্য বাজারে এলে পণ্যের দাম আরেক দফা কমতে পারে। তবে আমদানিকারকরা ইচ্ছা করেই এসব পণ্য খালাস করছে না। শুনেছি কয়েক সপ্তাহ ধরে এসব আদা, রসুন ও পেঁয়াজ বন্দরে পড়ে আছে।’