বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জন্য পেনশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উন্নত বিশ্বের দেশে সব নাগরিকের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশে এতদিন কেবল সরকারি চাকুরে ও বিভিন্ন সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের জন্যই এ সেবাটি চালু ছিল। তবে ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে সরকার চালু করেছে সর্বজনীন পেনশন স্কিম, যে স্কিমে দেশের যে কোনো নাগরিক যুক্ত হতে পারবেন। তবে নাগরিকদের ক্ষেত্রে স্কিমে যুক্ত হওয়ার বিষয়টিকে ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে আইনে। অন্যদিকে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য যে পেনশন ব্যবস্থা চালু রয়েছে, সেটি বহাল থাকবে বলে ধারণা করা হলেও আইনে ভিন্ন ভিন্ন প্যাকেজের মাধ্যমে তাদের এ স্কিমে যুক্ত করা হবে বলে জানা যাচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হতে পারত। কিন্তু স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য বাধ্যতামূলক করার পর থেকেই এ স্কিম নিয়ে শুরু হয়েছে নানা বিরোধ।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘প্রত্যয় প্রত্যাহারের দাবি: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামীকাল থেকে কর্মবিরতি, বন্ধ ক্লাস-পরীক্ষা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে যোগদান করা শিক্ষকদের জন্য সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ নামক একটি স্কিমে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ স্কিমকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। এটিকে বৈষম্যমূলক বলার পেছনে যৌক্তিক কারণও আছে বৈকি। কেননা যারা এই স্কিমের প্রক্রিয়াগত কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন, সেই আমলা শ্রেণি ও অন্যান্য সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য এখনও এমন কোনো ঘোষণা আসেনি। অবশ্য চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে, আগামী বছরের পহেলা জুলাই থেকে সরকারি চাকুরেদের জন্যও ভিন্ন নামে আরেকটি স্কিম চালু করা হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য চালু করা স্কিমের চেয়ে সেই স্কিমে সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকবে কি না, সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তাছাড়া ‘চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম’ বলে একটি কথা আছে। চাকরিজীবীদের জন্য যদি নতুন কোনো বিধান চালু করতেই হয়, তাহলে সেটি আমলাতন্ত্র দিয়েই শুরু করা উচিত।
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড বলে একটি কথা আছে। কিন্তু সেজন্য প্রয়োজন গুণগত শিক্ষা। আর গুণগত শিক্ষার জন্য দরকার যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ প্রদান। আর যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক পেতে হলে আবশ্যিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবেন, তাদের সুযোগ-সুবিধা সাধারণ চাকরিজীবীদের তুলনায় বেশি হতে হবে। তা না হলে ভালো শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহী হবেন না। সাধারণ চাকরিজীবীদের বেতন স্কেলের সঙ্গে স্কিল মিলিয়ে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা নির্ধারণের কোনো যুক্তি নেই। বিশ্বের যেসব দেশ জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নতি করেছে, তারা শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা অনেক বাড়িয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেই এমন উদাহরণ বিদ্যমান। কাজেই জাতির কল্যাণের বৃহত্তর স্বার্থে শিক্ষকদের মর্যাদা বাড়াতে হবে। তা না হলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী জনশক্তি তৈরি করা সম্ভব হবে না। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য জারি করা প্রজ্ঞাপন স্থগিত করে আগামী বছর সব সরকারি সুবিধাভোগী চাকরিজীবীর জন্য একযোগে নতুন পেনশন ব্যবস্থা চালু হওয়া উচিত। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সজাগ হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।