শেয়ার বিজ ডেস্ক: সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষকরা। গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয় তিনটির নিজ নিজ ক্যাম্পাসে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
টাঙ্গাইল: সর্বজনীন পেনশন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং এ প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি (মাভাবিপ্রবিশিস)। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এএসএম সাইফুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. মাসুদার রহমান প্রমুখ। কর্মসূচিতে লাইফ সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুক, অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল করিম, অধ্যাপক ড. লুৎফুন্নেসা বারি, নুরজাহান খাতুনসহ অন্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ন্যক্কারজনক জায়গায় পৌঁছে দেয়ার একটি ষড়যন্ত্র চলছে। এই কুচক্রী মহলের বিরুদ্ধে আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছি। সর্বজনীন পেনশন স্কিম সবার জন্য হওয়া উচিত, শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য নয়। এর বাইরেও স্বতন্ত্র পে-স্কেলের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমাদের দাবি বাস্তবায়িত না হলে সামনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সর্বজনীন পেনশন-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তিকরণ ও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ। গতকাল দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধু চত্বরে এ মানববন্ধন করা হয়।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আবদুল হক বলেন, ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অবনমন করে সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছিলেন, তখন আমাদের বঞ্চিত করা হয়। পরে সুপার স্কিমের কথা বললেও সেটা কার্যকর করা হয়নি। যখনই আমরা স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর জন্য কথা বলতে যাই, তখন আমাদের বলা হয়, আপনারা কেন সবার সঙ্গে তুলনা করেন? আপনারা তো অতুলনীয়। আমরা তখনই কথা বলতে যাই, যখন আমাদের অবমূল্যায়ন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ আমাদেরকে সর্বজনীন পেনশন স্কেলের নামে আমাদের বৈষম্যমূলক পেনশন স্কেল করার প্রজ্ঞাপন করা হয়েছে। আপনারা জানেন, সর্বজনীন হয় তখনই যখন একটি রাষ্ট্রের সব পেশার কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত মানুষকে সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু যারা এ প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছেন, তারা বলছেন এটা সর্বজনীন কিন্তু তারা এটাতে যুক্ত হতে চান না। তারা বলছেন, এটাতে যুক্ত হন, এটা খুবই ভালো; কিন্তু আমরা যুক্ত হবো না।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম আবু নোমানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড মো. আলাউদ্দিন ও চবি শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদের অন্য সদস্যরা।
খুবি: খুবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এসএম ফিরোজের সভাপতিত্বে ও সহসভাপতি অধ্যাপক ড. তরুণ কান্তি বোসের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. ইয়াছিন আলী, অধ্যাপক ড. মো. মনিরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মো. মতিউল ইসলাম, ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. এটিএম জহিরউদ্দিন, ফার্মেসি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাধু, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত, সয়েল ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক মো. সানাউল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. তুহিন রায়, ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মো. মোর্তুজা আহমেদ।
খুবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এসএম ফিরোজ বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মাধ্যমে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ পেনশন সুবিধার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু এই স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি বৈষম্যের সৃষ্টি করা হয়েছে। এই বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করতে হবে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুপার গ্রেড প্রদান করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ, ২০২৪ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় কতৃর্ক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, যেসব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ১ জুলাইয়ের পর যোগদান করবেন তাদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার জন্য বিদ্যমান অবসর সুবিধা-সংক্রান্ত বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে না।