পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ থামাতে বাস্তবানুগ ব্যবস্থা নিন

উত্তরাধিকারীদের বঞ্চিত করার প্রবণতা আমাদের সমাজ-সংস্কৃতিতে প্রবলভাবেই আছে। পৈতৃক সম্পত্তির হিসাব চাইতে গেলে আপনজনের আসল চেহারা উšে§াচিত হয়।  সহোদরের সম্পত্তির হিসাব বুঝিয়ে দেয়ার আগেই নিজের সন্তানদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে দেন কেউ। সম্পত্তির ভাগাভাগির জন্য বৈধ অংশীদারদের সঙ্গে নয়, ওই আত্মীয়দের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করা হচ্ছে, যাদের সঙ্গে আত্মীয়তা করা হয়েছে কেবলই প্রভাবপ্রতিপত্তি বৃদ্ধির সম্ভাবনায়। স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে যথানিয়মে পৈতৃক সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা করেছেন, এমন লোক বিরল। সমাজে ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সদস্য, সম্ভ্রান্ত হিসেবে সম্মানিত, কোটি টাকার মালিক, কিংবা ধর্মকর্ম করেন খুবÑএমন ব্যক্তির বিরুদ্ধেও পৈতৃক সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারায় অংশীজনদের ঠকানোর অভিযোগ রয়েছে। সম্পত্তি বণ্টনে ইসলামি বিধান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো মুসলিম মারা গেলে তাকে কবরস্থ করার পরপর তার আত্মীয়দের প্রথম কর্তব্য হলো তার সম্পদের বিষয়ে পারিবারিক পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়া। কিন্তু আমাদের দেশে মৃতের সম্পদের ক্ষেত্রে তা করা হয় না, জিইয়ে রাখা হয়। অনেক পরিবারে কারও মৃত্যুর পর ২০-৩০ বছর পেরিয়ে গেছে, তাও সম্পদ বণ্টন করা হয়নি। ব্যক্তি মরতে না মরতেই সম্পত্তির ভাগ করাকে কেউ  নীচ  ও হীন কাজ বলে আখ্যা দেন! অথচ একসময় খুনখারাবিও হয়। 

রাজনীতি, আচার-আচরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভাইদের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান  থাকলেও বোনদের ঠকানোর ব্যাপারে তারা এক ও অভিন্ন। সুযোগ পেলে সহোদরকে বঞ্চিত করতে ছাড়েন না। যে ভাইয়েরা বাড়িতে থাকেন, তারা অপেক্ষাকৃত ভালো জমি নিজেরা নেন অনুপস্থিত ভাইদের ঠকিয়ে। তাদের লাজলজ্জাও কম। সমাজে সমালোচনা-কানাঘুষা হলেও তারা নিবৃত্ত হয় না।  

সরকারি ওয়েবপোর্টাল জাতীয় তথ্য বাতায়নে ‘উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর’ অ্যাপ সন্নিবেশিত আছে। এতে এক ক্লিকেই সম্পত্তির হিসাব পাওয়া যায়। কিন্তু হিসাব পাওয়া মানে তো সম্পত্তি দখলে আসা নয়। এমনও দেখা গেছে, বঞ্চিত ব্যক্তি বিচারের ভার প্রকৃতির ওপর ছেড়ে দিয়ে ধৈর্য ধরেছেন, সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে প্রকাশ্যে আনছেন না কেউ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মসহ কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে ‘ভূমি ব্যবস্থাপনায় সাম্প্রতিক উদ্যোগ ও নাগরিক অধিকার’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে বিভিন্ন জনের বক্তব্যে কিছু বিষয় উঠে এসেছে, যা বাস্তবায়িত হলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে বলেই আমাদের ধারণা। যেমন, বোনের জমি দখল করলে সাজা পাবে ভাই। কেউ যদি বলে বোন মৌখিকভাবে আমাকে দিয়েছে, তাও মাফ নেই। ওই অপরাধে সাজা পেতেই হবে।

বাংলাদেশে প্রতি বছর বিচারাধীন মামলার প্রায় ৬০ শতাংশ জমিজমা-সংক্রান্ত। এ বিষয়গুলো নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশ সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাইজেশনসহ নানা উদ্যোগ নিলেও নতুন উদ্যোগ সাধারণ মানুষের মনোযোগ কাড়বে। সংলাপে ভূমিমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন, শান্তিপূর্ণ ও ঝামেলামুক্তভাবে জমি পরের প্রজšে§র কাছে হস্তান্তর করতে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থাই নেয়া হবে।

মানুষ বিভিন্নভাবে সম্পত্তি অর্জন করে। তবে মৌরসিসূত্রে (পৈতৃকসূত্রে) অর্জন করা সম্পত্তিতে সবচেয়ে বেশি বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করে। বেশিরভাগ মানুষই জানেন না, কী পরিমাণ সম্পত্তি অর্জন করেছেন তিনি। পুরুষ হোক আর নারী হোক, কেউ যেন প্রতারিত ও বঞ্চিত না হন, সে লক্ষ্যে রাষ্ট্রকে স্থায়ী সমাধানে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে হবে।