Print Date & Time : 2 August 2025 Saturday 8:41 pm

পোশাককর্মীদের কভিড টিকাদান নিশ্চিত করুন

আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প। স্বাধীনতার পরের বছর মাত্র ৩৪ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। তার মধ্যে ৯০ শতাংশ বা ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলারের পণ্যই ছিল পাট ও পাটজাত। পরবর্তী ৫০ বছর আগের পণ্য রপ্তানিচিত্রের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির বড় ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে তৈরি পোশাক খাত। পাঁচ দশকের ব্যবধানে রপ্তানি আয় ৯৬ গুণ বৃদ্ধি, প্রায় ৪০ লাখ গ্রামীণ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন, সহযোগী শিল্পের বিকাশসহ অনেক ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে পোশাকশিল্প।

পোশাক খাতের রপ্তানি গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ডলারের, যা দেশীয় মুদ্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। মহামারি কভিডের কারণে গত অর্থবছর রপ্তানি কিছুটা কমে ২ হাজার ৭৯৪ কোটি ডলারে নেমে এসেছিল। তারপরও মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশই তৈরি পোশাকের দখলে।

বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে অবশেষে ভিয়েতনামের কাছে দ্বিতীয় অবস্থান হারিয়েছে বাংলাদেশ। গত ৩০ জুলাই ‘বিশ্ব বাণিজ্য পরিসংখ্যান পর্যালোচনা’ প্রতিবেদনে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছে, গত বছর বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে দুই হাজার ৮০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। ভিয়েতনাম রপ্তানি করেছে দুই হাজার ৯০০ কোটি ডলার। চীন সবচেয়ে বেশি ১৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।

কভিডকালে দীর্ঘ লকডাউনে আমাদের পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। অথচ একই সময় ভিয়েতনামের কারখানা খোলা ছিল। হয়তো এ কারণেই বাংলাদেশ পেছনে পড়ে। অবস্থা পুনরুদ্ধার করতে এখন থেকেই পরিকল্পিত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। ঠিক তখনই আমরা দেখলাম, কভিড-১৯ ঠেকানোর জন্য কঠোর লকডাউন থাকা সত্ত্বেও নানা শঙ্কা মাথায় নিয়ে রোববার ঢাকা ও সংলগ্ন এলাকার রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানাগুলো খুলেছে। ঈদের ছুটিতে কর্মস্থল ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া শ্রমিকদের ফিরে আসার সুবিধার্থে সাময়িক সময়ের জন্য দূরপাল্লার গণপরিবহনকেও চলাচলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

তৈরি পোশাক খাতের অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে কারখানা খোলা রাখার বিকল্প নেই। শ্রমিকদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তড়িঘড়ি করে কর্মস্থলে আনায় অনেক সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু তা পোশাকশিল্প মালিকরা আমলে নেননি বলেই ধারণা। তারা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা কোনো ব্যবস্থা নেননি। গতকাল শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করা হয়েছে। কারখানার প্রধান ফটকে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকলেও ছিল না কোনো তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা।

যেভাবে পড়িমরি করে চাকরি বাঁচাতে শ্রমিকরা কর্মস্থলে ফিরেছেন, তাতে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি। কিন্তু শ্রমিকদের জন্য সুরক্ষায় নেয়া ব্যবস্থা ছিল অপ্রতুল। আমাদের কভিড সংক্রমণও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, কারখানাও খুলতে হবে। এখন ১৮-ঊর্ধ্ব সব নাগরিককে কভিড টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্তত শ্রমঘন এলাকায় অগ্রাধিকার তালিকায় পোশাককর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। পোশাক মালিকরা নগদ প্রণোদনা পেতে, কারখানা খোলার জন্য দেনদরবার করবেন, শ্রমিকদের সুরক্ষা দিতেও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।