তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ না দেওয়া পর্যন্ত গাজীপুরসহ পোশাকশিল্পঘন সব এলাকায় বিকল্প উপায়ে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সংযোগের দাবি জানিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। তাদের দাবিতে যৌক্তিকতা রয়েছে। এতে শুধু মালিকপক্ষ নয়, অর্থনীতির স্বার্থও যুক্ত। আমরা মনে করি, এদিকে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি দেওয়া দরকার। বস্তুত শিল্প-কারখানাগুলোয় ২০১৮ সালের এপ্রিলের মধ্যে এলএনজি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। এত অল্প সময়ে পোশাকশিল্পঘন এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা সম্ভব কি-না, সেটাও প্রশ্ন। এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণ ও সুষ্ঠু বিতরণ ব্যবস্থার প্রতি জোর দেওয়া যেতে পারে। তাহলে বিদ্যমান সংকট কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা যাবে।
বর্তমান সংকটের কথা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানানোর পর একটি সার কারখানায় দেওয়া বন্ধ রেখে সেটার গ্যাস পোশাকশিল্পে সরবরাহের প্রতিশ্রæতি দেওয়া হয়েছিল। এক্ষেত্রে অগ্রগতি কতটা হয়েছে, জানা নেই। বলা বাহুল্য, এটা সংকট মোকাবেলার একটি সাময়িক কৌশল। উৎপাদনে থাকা কোনো সার কারখানা দীর্ঘ সময় বন্ধ রাখলে কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না, সেটাও ভেবে দেখতে হবে। নীতিনির্ধারকদের মনে রাখা দরকার, ওখানকার এ সংকট দীর্ঘদিন চলতে দেওয়া যাবে না। জ্বালানির অভাবে কোনো পোশাকশিল্প কারখানা বন্ধ করে দিতে হলে সেখানে আরও সমস্যার উদ্ভব হবে স্বভাবতই। এজন্য সময় হাতে থাকা অবস্থায়ই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং তা করা দরকার ভেবেচিন্তে।
স্বভাবতই এ প্রশ্নও তুলতে চাই, ২০১৮ সালের এপ্রিলের মধ্যে এলএনজি সরবরাহের যে প্রতিশ্রুতি সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নের অগ্রগতি কতদূর? ধারণা করা যায়, এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময় পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকবেন পোশাকশিল্প কারখানার মালিকরা। প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন যথাসময়ে করা না গেলে সংকট আরও ঘনীভ‚ত হতে পারে। এজন্য আমরা চাইব, উল্লিখিত সময় ঘিরে পোশাকশিল্পে এলএনজি সরবরাহের সব পদক্ষেপ নেওয়া হোক। এক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরি, জ্বালানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন না হলে কোনো কারখানাই তার উৎপাদন সক্ষমতা পরিপূর্ণরূপে কাজে লাগাতে পারে না। অর্ডার পাওয়া পণ্যের উৎপাদন যথাসময়ে সম্পন্ন করতে না পারলে কোনো কোনো সময় বড় লোকসান গুনতে হয় রফতানিকারককে। গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় এমন ঘটনা আগের চেয়ে বেড়েছে কি না, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে পোশাকশিল্পের আর কোনো উদ্যোক্তা এমন ক্ষতির সম্মুখীন না হোন, সেটা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও আন্তরিক হোক সরকার।
আমাদের তৈরি পোশাকশিল্প খাত ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, মালিকপক্ষের এমন দাবির যথার্থতা কিছুটা হলেও রয়েছে। বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে এর পক্ষে কিছু যুক্তি তুলে ধরেছেন বিজিএমইএ সভাপতি। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হলে সেটা ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘা’ই হবে বলে মনে করছেন তারা। তৈরি পোশাকশিল্পে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় বাংলাদেশ যে সমপর্যায়ের দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে, পরিসংখ্যানের দিকে দৃষ্টিপাত করলে তা স্পষ্ট হয়। এ অবস্থায় এমন কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত খাতটির ওপর চাপানো ঠিক হবে না, যার কারণে এ শিল্পে দেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরও কমে আসে। এ খাতে কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি পেতে হলে এখন বরং উচিত হবে সক্ষমতার যেসব মানদণ্ডে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে, সেসব ক্ষেত্রে উত্তরণ ঘটানো। বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের রফতানি আয় রয়েছে নেতিবাচক ধারায়। রফতানি আয়ে খাতটির অবদান যদি বাড়াতে চাই, সেজন্যও নিতে হবে এ শিল্পবান্ধব নীতি-সিদ্ধান্ত। এজন্য শুধু মালিকপক্ষের দাবির অপেক্ষায় বসে থাকলে চলবে না; সরকারকেও স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এ শিল্পবান্ধব সিদ্ধান্ত গ্রহণে এগিয়ে আসতে হবে।