পোশাকশিল্প: আন্তর্জাতিক রপ্তানিকারক ব্র্যান্ডে রূপ নেওয়ার সময় এখনই

কেএম রিদ্বওয়ান রাশেদ রুবাব ও সামিয়া জাবিন জ্যোতি : বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে বেশ কিছু বছর ধরে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে তৈরি পোশাকশিল্প। বিশ্ববাজারে রপ্তানি খাতে চীন প্রথম স্থান ধরে রাখলেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দ্বিতীয় স্থানটি ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু বাংলাদেশের এ অবস্থানের ভিত্তি নড়বড়ে করে দিচ্ছে সবচেয়ে কাছের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম। ২০১৯ পঞ্জিকাবর্ষের প্রথম ৯ মাসে ভিয়েতনামের রপ্তানিকৃত  পোশাকশিল্পের মূল্য ছিল ২৯.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে বাংলাদেশের ছিল ২৬.১ বিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশের  পোশাক রপ্তানির হার হ্রাস পেয়েছে অক্টোবরে ২১ শতাংশ, নভেম্বরে ১২ শতাংশ এবং ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত

৩.২৭ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পোশাকশিল্পে রপ্তানির হার এভাবে হ্রাস পেতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের কাছে নিজের অবস্থান হারিয়ে  ফেলবে। বাংলাদেশের রপ্তানি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে: ডলারের বিপরীতে প্রতিযোগী দেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন, প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমে যাওয়া ও পোশাকের নতুন বাজার খুঁজে না পাওয়া। বাংলাদেশের এই সংকটময় অবস্থা কাটিয়ে উঠতে নামি-দামি ব্র্যান্ডের অধীনে তৈরি পোশাক রপ্তানির পাশাপাশি নিজস্ব আন্তর্জাতিক মানের ব্র্যান্ড তৈরি করে তার অধীনে  পোশাক রপ্তানিতে মনোযোগী হওয়ার এখনই সময়। কারণ, দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ বেশ দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর জন্য পোশাক তৈরি করে এলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নিজস্ব কোনো পোশাকশিল্পের ব্র্যান্ড নেই। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশের অধিকসংখ্যক গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান  তৈরি পোশাকশিল্পে উদ্ভাবন ও নতুনত্ব আনার ব্যাপারে উদাসীন; বরং তারা বিশ্বের নামি-দামি ব্র্যান্ডগুলোর অধীনেই পণ্য উৎপাদন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। বিশ্বায়নের এ যুগে নিত্যপরিবর্তনশীল চাহিদা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প রপ্তানি খাতের জন্য যেমন চ্যালেঞ্জস্বরূপ, তেমনিভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজস্ব ব্র্যান্ড পরিচিতি লাভের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশি গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজস্ব ব্র্যান্ডের তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারে, তবে তৈরি পোশাকশিল্প রপ্তানি খাতে বাংলাদেশের আয় দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, নিজস্ব ব্র্যান্ডের অধীনে পোশাক রপ্তানি করতে পারলে সম্পূর্ণ লাভের অংশই বাংলাদেশ ভোগ করতে পারবে। পাশাপাশি বৈশ্বিক রপ্তানি খাতের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ তার শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশের নিজস্ব আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড বিশ্ববাজারে পরিচিত করে  তোলার জন্য গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে রিসার্চ অ্যান্ড  ডেভেলপমেন্টে যথাযথ বিনিয়োগ করতে হবে। এর ফলে পণ্যে নতুনত্ব ও বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি ‘ভ্যালু অ্যাডিশন’-এর মাধ্যমে বাংলাদেশি রপ্তানিকারক ব্র্যান্ড আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থান করে নিতে পারবে। বাংলাদেশি স্বনামধন্য গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এককভাবে কাজ না করে যদি সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালায়, তবে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড হওয়ার পথ সহজতর হবে বলে আশা করা যায়।

পাশাপাশি আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর মুদ্রার মানের সঙ্গে যথাযথ সামঞ্জস্য রাখতে হবে, যাতে করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আমাদের দেশের পোশাক খাতে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হয়। আমাদের নিজস্ব ব্র্যান্ড প্রস্তুতকরণে পশ্চিমা বাজারকে টার্গেট না করে এশীয় বাজারকে টার্গেট করতে হবে। কারণ, পশ্চিমা বাজারে প্রতিযোগিতার চেয়ে এশীয় বাজারে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকা সহজতর হবে।  সে সঙ্গে উদ্যোক্তাদের এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশ করার আগে তারা যেন নিজের দেশে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়। আমাদের নিজস্ব রপ্তানিকারক ব্র্যান্ডই বিশ্ববাজারে সফলতা অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অদূর ভবিষ্যতে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে পারে।

লেখকদ্বয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী