গ্রিক পুরাণে বর্ণিত ‘প্যান্ডোরার বাক্সে’র কথা অনেকেই জানেন। প্যান্ডোরাকে দেবরাজ জিউস একটি জার উপহার দিলেন। উপহার দেয়ার সময় জিউস খুব করে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, যাতে কিছুতেই জারের মুখ না খোলা হয়।
নিষেধ করায় প্যান্ডোরার আগ্রহ বাড়ল। তার প্রবল কৌতূহল, কী আছে ওই জারে? কতবার খুলতে ইচ্ছে করল, কিন্তু জিউসের বারণের কথা ভেবে খুলল না। একসময় কৌতূহলের কাছে হার মানল। প্যান্ডোরা খুলেই ফেলল সেই জার। আর যাবে কোথায়! রোগ, দুঃখ, হিংসা, অসাধুতাÑআরও রাজ্যের যত মন্দ জিনিস সব একে একে বেরিয়ে পড়ল ভেতর থেকে। দুনিয়া ভরে গেল অশান্তি, দুঃখ-কষ্ট, রোগ-যন্ত্রণায়। মানুষের শান্তি গেল চলে। জিউসের ইচ্ছা ছিল মানুষকে শাস্তি দেয়ার। তিনি কৌশলে ইচ্ছে পূরণ করলেন। প্যান্ডোরাও বুঝতে পারল যে, মন্দ জিনিসগুলো সব বেরিয়ে যাচ্ছে। তখন সে তাড়াতাড়ি মুখটা বন্ধ করে দিল। অবশ্য ততক্ষণে রোগ-যন্ত্রণা আর অশান্তি উপাদানগুলো ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। তবে সব মন্দ বেরিয়ে পড়লেও একটা জিনিস জারের মধ্যে থেকে গিয়েছিল। সেই জিনিসটা ছিল আশা। তার মানে খারাপ জিনিসগুলো বেরিয়ে পড়লেও শুধু আশাটাই রয়ে গিয়েছিল।
গ্রিক পুরাণে জারের কথা থাকলেও পরে জারের বদলে বাক্সের কথাটা প্রচলিত হয়ে গেছে। সেই থেকে প্যান্ডোরার বাক্স। আর সারা দুনিয়াতেই এখন ‘প্যান্ডোরার বাক্স’ কথাটা প্রবাদবাক্যের মর্যাদা পেয়েছে। কেউ যদি বলে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দেব, তাহলে বুঝতে হবে তার কাছে এমন কোনো বিপজ্জনক তথ্য আছে, যা বেরিয়ে পড়লে সমস্যা হবে। সাম্প্রতিক সময়ে প্যান্ডোরা পেপারস সারা বিশ্বে আলোচিত নাম। গত ৩ অক্টোবর প্রায় ১ কোটি ১৯ লাখ গোপন নথি প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাপী অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জোট ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)। ১১৭টি দেশের ৬০০ জনের বেশি সাংবাদিক ১৪টি উৎস থেকে নথি বিশ্লেষণ করে বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি প্রভাবশালী গণমাধ্যমে প্রকাশ করছে।
দুর্ভাগ্যজনক হলো, প্যান্ডোরা পেপার্সে বাংলাদেশি আটজন ধন্যাঢ্য ব্যক্তির নাম রয়েছে। গত সোমবার আইসিআইজে ফাঁসকৃত গোপনীয় আর্থিক দলিলপত্রে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। প্যান্ডোরা পেপার্সে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের গোপনীয় আর্থিক দলিলপত্রে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে নিবন্ধিত কোম্পানির মালিক ওই ৮ বাংলাদেশি। এ বাংলাদেশিদের প্রত্যেকেরই অন্য দেশের নাগরিকত্বও আছে। তবে এ তালিকায় ঠাঁই পাওয়া বাংলাদেশিদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্যান্ডোরা পেপার্সের সব তথ্য সঠিক এটি যেমন নিশ্চিত করে বলা যায় না, তেমনটি পুরো তথ্য অসত্য, তা বলাও যৌক্তিক নয়। দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা জিএফআই বলেছে, ২০১৮ পর্যন্ত পূর্ববর্তী ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, অর্থ পাচারে শীর্ষ ৩০ দেশের রয়েছে বাংলাদেশ। দেশীয় বিশেজ্ঞরা বলছেন, কেবল ২০১৫ সালে পাচার হওয়া অর্থ দিয়েই দুটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। তাই দেশের স্বার্থে প্যান্ডোরা পেপার্সে যাদের নাম এসেছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে হবে।