বড় অবকাঠামো বা স্থাপনা নির্মাণ প্রকল্পে কাজের ধীরগতিতে ব্যয় বেড়ে যায়। কোনো প্রকল্প অনুমোদনের আগে নির্মাণসামগ্রী পরিবহন ব্যয়, কর্মীদের বেতনসহ আনুষঙ্গিকের সম্ভাব্য হিসাব ধরে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্প দীর্ঘসূত্রতায় পর্যবসিত হলে ব্যয় অনেক বাড়ে। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের কাজ শেষ হতে ১০ বছর লেগে যাওয়ার দৃষ্টান্তও রয়েছে। কিন্তু নির্মাণসামগ্রীর দাম, পরিবহন খরচ ও কর্মীদের বেতন-ভাতা এক জায়গায় থাকেনি। বছর বছর তা বরং বেড়েছে। এতে নির্মাণব্যয় বেড়ে যায়। তাই প্রকল্পে ধীরগতি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।
রাজধানীর মগবাজার উড়াল সেতুর ব্যয় নির্মাণ চলাকালে চার দফা বাড়ানো হয়। এ ধরনের অনেক প্রকল্পেরই মেয়াদ বেড়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত প্রায় শতভাগ। প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতায় দেশের কী পরিমাণ অর্থ অপচয় হয়েছে, সে বিষয়ে তথ্য নেই। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিকল্পিতভাবে প্রকল্প ঝুলিয়ে রাখে ঠিকাদার ও বাস্তবায়নকারী সংস্থা। গতকাল শেয়ার বিজে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হলে বেড়ে যায় ঠিকাদারের চুক্তিমূল্য। প্রকল্প ঝুলে থাকলে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোও পায় বাড়তি সুবিধা।
সরকারি পরিপত্র অনুসারে একজন কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একটি প্রকল্পের পরিচালক হবেন। বিশেষ প্রয়োজনে অনুমোদনসাপেক্ষে সর্বোচ্চ দুটির দায়িত্ব পেতে পারেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের অর্থ নয়ছয়ের সুযোগ করে দিতেই এক ব্যক্তিকে বেশি প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্ব^য়নহীনতা, দরপত্র মূল্যায়নে কালক্ষেপণ, অদক্ষ পরামর্শক, অযোগ্য ব্যক্তিবে পিডির দায়িত্ব দেয়া, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেয়া, একাধিক সংস্থার একই ধরনের প্রকল্প গ্রহণ এবং দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে উন্নয়ন প্রকল্প বছরের পর বছর ঝুলে থাকার অভিযোগ নতুন নয়।
দুঃখজনক হলো, প্রকল্পে বাস্তবায়নের শেষ দিকে বা পরে জানা যায়, বড় ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে, তাতে রাষ্ট্রের অর্থ লোপাট হয়েছে। প্রকল্পের কাজ চলাকালে সুষ্ঠু তদারকি ও অগ্রগতি মূল্যায়ন করা গেলে দুর্নীতি ও অনিয়ম কমবে। স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
ঠিকাদাররা একই সময়ে একাধিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কাজ শুরু করার পর তাতে টানা কাজ করে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে হবে, ঠিকাদারের কাছ থেকে এমন নিশ্চয়তা নিতে হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের লোভের কারণেই দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে। এজন্য নকশা পরিবর্তন, ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় বৃদ্ধি, নির্মাণসামগ্রীর ব্যয় বৃদ্ধি, কর্মপরিধি বৃদ্ধির নামে কৌশলে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার, ভাতা নেয়াসহ নানা সুবিধার কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা চান না দ্রুত প্রকল্প শেষ হয়ে যাক। এতে ক্ষতির মুখে পড়ে সরকার তথা জনগণ। কারণ জনগণের করের টাকায় এসব প্রকল্পের ব্যয় নির্বাহ করা হয়। জনগণের অর্থের এই অপচয় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারের সব মন্ত্রণালয়কে তাদের অধীন সব প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে।