প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা কাম্য নয়

‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: তিন বছরের প্রকল্প সাড়ে ১৪ বছর পর আংশিক উদ্বোধন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। আমাদের প্রতিবেদক জানান, ঢাকা শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে নির্বিঘœ ও দ্রুত সড়ক যোগাযোগ চালু করতে ২০০৯ সালে নেয়া হয় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। এটি ২০১৩ সালে উদ্বোধনের কথা ছিল। নকশা সংশোধনসহ নানা কারণে প্রকল্পটির মেয়াদকাল ৫ দফা বাড়ানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা; সবশেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কয়েক দফা নকশাই পরিবর্তন করা হয়েছে। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা, পিপিপি অংশীদারের অর্থের সংস্থান না হওয়াসহ নানা জটিলতায় এর নির্মাণকাজ শেষ করার সময়সীমা পাঁচবার পিছিয়েছে। সর্বশেষ হিসাবে এটি ২০২৪ সালে পুরোপুরি শেষ হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আমাদের দেশে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা না থাকায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে ব্যয় বাড়ছে। বিভিন্ন স্থাপনা ও অবকাঠামো নির্মাণে সর্বাপেক্ষা বেশি ব্যয় করার বিশ্বব্যাপী পরিচিতিও রয়েছে। প্রকল্পব্যয় বেড়ে যাওয়ায় যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার নির্দেশনাও দিয়েছেন। এখন বোঝা গেল প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন পালিত হচ্ছে না।

কভিডকালে নির্মাণে কিংবা প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি কিছুটা ধীর হতেই পারে। ‘কিন্তু তিন বছরের প্রকল্প সাড়ে ১৪ বছর পর আংশিক উদ্বোধন’ কতটা হতাশার, তা বলার অবকাশ রাখে না। প্রকল্পে ধীরগতির কারণে নানা ছুতোয় ব্যয় বেড়ে যায়। বেশি ব্যয়ে নির্মিত অবকাঠামো মানসম্পন্ন হয়, এটিই প্রত্যাশিত। কিন্তু  এটিও আমরা দেখেছি, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ব্যয় বেড়ে যায়। কাজে বিলম্ব হলে একশ্রেণির কর্মকর্তার পকেট ভারী হয়। তারা ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধির জন্য কারণে-অকারণে কালক্ষেপণ করেন। ফলে বেশি ব্যয়েও নি¤œমানের কাজ হয়ে থাকে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ কোনো প্রকল্পেই অতিরিক্ত ব্যয় প্রত্যাশিত নয়।

সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার অধীনে নানা রকমের প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যয় বৃদ্ধি এখন সাধারণ প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। প্রথমে নির্ধারিত সময় ও প্রথম-প্রাক্কলিত ব্যয়সীমার মধ্যেই প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়ার দৃষ্টান্ত অতি বিরল। কিংবা নেই বললেই চলে। সব কাজের পরিকল্পনা করা হয় জনগণের জন্য জনগণের স্বার্থে। যদিও তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দেশীয় উৎস থেকে হোক আর বিদেশ থেকে আনা ঋণ নিয়ে বাস্তবায়ন করা হোক অর্থের সংস্থান করে দেশে জনগণইে। তাই বলা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে দফায় দফায় সময় ও ব্যয় বাড়লে জনগণ শুধু সেবা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে না, তার কষ্টার্জিত করের টাকারও অপচয় হচ্ছে। অপচয় হলেও কথা ছিল না, যদি একান্ত অনিচ্ছাকৃত হতো। দেখা যায়, ব্যয় বৃদ্ধির উদ্দেশেই সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। তিন বছরের প্রকল্প যদি সাড়ে ১৪ বছর পর আংশিক উদ্বোধন করা হয়, তাহলে তা শেষ হতে কত যুগ লাগবে?  আমরা মনে করি, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে জবাবদিহি চাওয়া উচিত।