Print Date & Time : 7 July 2025 Monday 5:20 am

প্রকৃতিকে ধ্বংস করে উন্নয়ন টেকসই হবে না : পরিবেশ উপদেষ্টা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রকৃতিকে ধ্বংস করে উন্নয়ন হলে সে উন্নয়ন টেকসই হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। রাজধানীর শেরেবাংলানগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সম্মেলন কক্ষে ‘ইন্ট্রোডাকশন টু ফিনান্সিয়াল অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন্সট্রুমেন্ট ফর ক্লাইমেট ফিনান্স’ শীর্ষক প্রশিক্ষণের উদ্বোধনে গতকাল বুধবার তিনি এসব কথা বলেন।

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা যদি প্রকৃতিকে ধ্বংস করে, বন কেটে, পাহাড় কেটে রেললাইন নির্মাণকে উন্নয়ন ভাবি, তাহলে আমরা ভুল পথে চলছি। এ ভুল পথ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘উন্নয়ন বরাদ্দ সহযোগিতা যতই আসুক, তা যথেষ্ট হবে না যদি আমরা প্রকৃতিকে সংরক্ষণ না করি, যদি আমরা অভিযোজন এবং প্রশমন উভয় ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না করি।’

রিজওয়ানা হাসান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘ চুক্তি (ইউএনএফসিসিসি) এবং প্যারিস চুক্তির অধীনে যেসব দেশ আমাদের অর্থ দেয়ার কথা, তারা এখন নেচার বেসড সলিউশন বা প্রকৃতিনির্ভর সমাধানের কথা বলছে অথচ প্রকৃত অর্থ বরাদ্দ করছে না। তারা বলছে, তোমরা নিজেদের প্রস্তুত কর, প্রকৃতি রক্ষা কর, যাতে দুর্যোগে টিকে থাকতে পার। কিন্তু তারা নিজেদের দায় কমিয়ে আমাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে। এটি কোনো গ্রহণযোগ্য সমাধান নয় বলে তিনি তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘প্রকৃতি ও বন রক্ষার ক্ষেত্রে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করতে হবে।’

রিজওয়ানা হাসান বলেন, একটা সুবিধার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, সিডা, এডিবি এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীরা সহায়তা করছে। আমরা চাই এই প্রক্রিয়াটি ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকরভাবে শুরু হোক। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেছি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে বসতে যাচ্ছি।’

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, আজকের বাস্তবতায়, অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন না পেলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। অথচ অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য বরাদ্দের যে গ্লোবাল সমতা, তার কাছেও আমরা পৌঁছাতে পারিনি। বেশির ভাগ অর্থই যাচ্ছে প্রশমনে, যা উন্নত দেশগুলোর দায়িত্ব। ফলে আমরা একদিকে এমন সমস্যার ভুক্তভোগী, যা আমরা তৈরি করিনি, অন্যদিকে সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদের ঋণ নিতে হচ্ছে। তাই জলবায়ু অর্থায়নের রাজনীতি এবং ন্যায়বিচারের রাজনীতি গভীরভাবে বোঝা দরকার। আমাদের পরিকল্পনা আরও স্মার্ট, স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ন্যায়সঙ্গত হতে হবে। এখানে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অনেক কিছু হয়েছে, আরও অনেক কিছু হওয়া দরকার। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে যা হচ্ছে তা যথেষ্ট নয়, এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও যথেষ্ট নয় বলে উপদেষ্টা তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখেন। ইআরডি’র অতিরিক্ত সচিব এ কে এম সোহেল অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণের ওপর ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে এডিবি, সিডা, জিআইজেডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার এ দেশীয় প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।