প্রক্রিয়া জাত খাদ্য শিল্প বিকাশে উৎসাহদিন

গত ৯ জানুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূূরক শুল্ক বাড়িয়ে দেয়। সেখানে মেশিনে প্রস্তুতকৃত বিস্কুট, কেক, আচার, চাটনি, টমেটো পেস্ট, টমেটো কেচাপ, টমেটো সস, আম, আনারস, পেয়ারা, কলার পাল্প প্রভৃতি পণ্যের ওপর মূসক পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া ফলের রস ও ফ্রুট ড্রিংকসের ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। আর্টিফিশিয়াল/ফ্লেভার ড্রিংকস ও ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস (নন-কার্বোনেটেড) পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক শূন্য শতাংশ ছিল এবং বর্তমানে তা ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ী পর্যায়ে আগে পাঁচ শতাংশ হারে মূসক আরোপ ছিল, যা বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক এবং গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবকে ভোক্তার স্বার্থবিরোধী উল্লেখ করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাতের ব্যবসায়ীরা। রাজধানীতে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সদস্যরা এসব উদ্বেগের কথা জানান। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ওপর ভ্যাট ও করের বোঝা চাপানো হলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের শ্রমজীবী, প্রান্তিক কৃষক ও নিম্ন আয়ের মানুষ। যে হারে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য বিস্কুট, কেক, জুসসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। আর ভোক্তারা ক্রয়ক্ষমতা হারালে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।

প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য আমাদের সম্ভাবনাময় শিল্পের একটি। এটিকে প্রয়োজনীয়  নীতি সহায়তা দিলে খুব কম সময়ে এটি ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের শিল্পে উন্নীত হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় খাদ্যপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির যে প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে, তাতে এ লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন নয়। কিন্তু তাতে বাদ সাধছে অতিরিক্ত মূসক ও শুল্ক। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, দেশ থেকে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের রপ্তানি কয়েক বছরে প্রায় ৯০ শতাংশ বেড়েছে। আমরা যেসব প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি করি, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে রুটি, বিস্কুট, চানাচুর, ফলের রস ও অন্যান্য পানীয়, রান্নায় ব্যবহার্য মসলা, জ্যাম, জেলি প্রভৃতি। এসব খাদ্য রপ্তানি করা হয় প্রধানত ভারত, নেপাল, ভুটান, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশে; তবে ইউরোপ-আমেরিকায়ও কিছু পরিমাণে রপ্তানি হয় এবং এর পরিমাণ বাড়ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

এসব খাদ্যপণ্যের সিংহভাগ ভোক্তা এশিয়া ও আফ্রিকার মানুষ এবং একটা অংশ ইউরোপ-আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশি ও এশীয় জনগোষ্ঠী। ইউরোপ ও আমেরিকার ভোক্তাদের আকর্ষণ করা গেলে রপ্তানি আয় অনেক বাড়ানো সম্ভব। সেজন্য প্রথমেই প্রয়োজন আমাদের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের গুণগত মান বাড়ানো, যাতে সেগুলো ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে প্রচলিত অন্যান্য দেশের খাদ্যপণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে। সেটি করতে গেলে ব্যয় বাড়বে। এখন যদি উচ্চহারে শুল্ক-মূসক আরোপ করা হয়, তাতে এ খাত কাঙ্ক্ষিত উন্নতি করতে সক্ষম হবে না। কয়েক কোটি টাকার জন্য শতকোটি টাকার সম্ভাবনা নস্যাৎ হয়ে যেতে পারে। শুধু রপ্তানির জন্য নয়, দেশের ভেতরের ভোক্তাদের জন্যও একই গুণগত মানসম্পন্ন খাদ্যপণ্য উৎপাদন করা প্রয়োজন।